দাঙ্গাবাজরা আসছে শুনেও ক্রিকেটে মত্ত দিল্লি পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রোববার, বসন্তের দুপুরবেলা। দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছে উগ্রবাদী দাঙ্গাবাজরা। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে বারবার খবর আসছে ‘ভিড় বাড়ছে’, ‘জনতা উত্তেজিত’, ‘বড় ঝামেলা হতে পারে’, ‘ফোর্স চাই’। কিন্তু কে শোনে কার কথা! পুলিশ তখন ব্যস্ত ক্রিকেট খেলায়।

শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, দাঙ্গা শুরুর সময় দিল্লির কনট প্লেসের কাছে বড়াখাম্বা রোডের একটি বেসরকারি স্কুল মাঠে বাৎসরিক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে মজে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের মাঠ থেকে বড়জোর ১০ কিলোমিটার দূরে জাফরাবাদ। সেখান থেকে বারবার সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। এমনকি খেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজনও এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। দাঙ্গার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই সময় পুলিশ তৎপর হলে সহিংসতা এত দূর গড়াত না।

খবরে বলা হয়, এবারের ঘটনায় ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষ মাত্র। মূলত দক্ষ কর্মকর্তার অভাব, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার অক্ষমতা, সব স্তরে পুলিশকর্মীদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে যাওয়ার প্রভাব শুধু দিল্লির দাঙ্গাতেই নয়, জামিয়া থেকে জেএনইউ সবখানেই দেখা গেছে। বারবার ফুটে উঠেছে দিল্লি পুলিশের অদক্ষতার ছবি।

ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অতীতে এ ধরনের পরিস্থিতি হলে সবার আগে প্রতিটি বাড়ির ছাদে পুলিশ মোতায়েন করা হতো। আটকে দেয়া হতো উপর থেকে আক্রমণের পথ। এরপর প্রতিটি গলির দু’প্রান্ত আটকে সবাইকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই ঝামেলা শেষ! কিন্তু এবারের দাঙ্গায় প্রথম দু’দিন পুলিশ কী করবে, তা স্পষ্ট ছিল না তাদের কাছে।

প্রশ্ন উঠছে ওই সময় দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়কের দক্ষতা নিয়েও। তিনি কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময়ই ক্রাইম ব্রাঞ্চ, ভিজিল্যান্স ও প্রশাসনিক বিভাগে কাটিয়েছেন। এ কারণে বাহিনী পরিচালনায় তার দক্ষতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

delhi-police-2

বিরোধীদের প্রশ্ন, মঙ্গলবার ১৪৪ ধারা জারি করা হলো, তা রোববারেই কেন করা হলো না? সোমবারই কেন ‘দেখা মাত্র গুলি’র আদেশ দেয়া হলো না?

ব্যর্থ দিল্লির গোয়েন্দা বিভাগও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ওই এলাকাগুলোতে উগ্রবাদীরা পেট্রোলবোমা, ইট, বন্দুক জমা করছে, বাইরের লোক এলাকায় ঢুকছে, মুসলিমদের বাড়ি চিহ্নিত করছে, হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সমবেত হতে বলা হচ্ছে, এসব কোনোটাই ধরতে পারেনি গোয়েন্দারা।

এছাড়া, পুলিশের উঁচু ও নিচুতলার মধ্যে অনাস্থাও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গতবছর আইনজীবীদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন দিল্লি হাইকোর্ট। এতে নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ কমিশনার। অভিযোগ ওঠে, সে সময়ে সংঘর্ষ ঠেকাতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা তৎপর হয়েছিলেন, তাদের সহযোগিতা করেননি কমিশনার। এ নিয়ে সদর দফতরেই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা, যা এর আগে কখনও হয়নি। এসব কারণে বিচ্ছিন্নতাবোধ বেড়েছে পুলিশবাহিনীতে। তাই সংঘর্ষ হচ্ছে দেখেও নিজ থেকে এগিয়ে যাননি কেউই।

কেএএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।