দিল্লির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১০
নয়াদিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২০০ এর বেশি।
যদিও সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে দিল্লি পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আহতদের মধ্যে ৫৬ জন পুলিশকর্মী রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
২৪ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এদিন হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এক পুলিশ কর্মীসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০। সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এদিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে আহত সাংবাদিক আকাশ এখন হাসপাতালে। এ ছাড়া জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এনডিটিভির দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। গতকাল সেখানেই হামলার শিকার হন টাইমস অব ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা পড়লে শিউরে উঠতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলাসহ ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক।
সিএএ-কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে গত তিনদিন ধরে উত্তাল দিল্লি। সোমবার এক পুলিশ কর্মীসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। লাঠি, রড, ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা আরও বাড়ে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এম এস রনধাওয়া সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে এখনও গলি, সরু রাস্তায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে ৬৭ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোট ১১টি এফআইআর-এর ভিত্তিতে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে সরু গলিগুলিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন রনধাওয়া। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। কিন্তু রনধাওয়া সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সিআরপিএফ, র্যাফ ও পুলিশ মিলিয়ে পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
সোমবারের সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরকারি অফিসেও হাজিরা ছিল খুব কম। জাফরাবাদ মৌজপুর, বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল দিনভর। এই স্টেশনগুলির গেট বন্ধ করে রাখার পাশাপাশি ট্রেনও চালানো হয়নি।
দিল্লির উত্তেজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১২ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠকের ডাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজাল, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজাল বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ও আমি দু’জনেই চাই দিল্লিতে শান্তি ফিরে আসুক। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় যা করার তাই করা উচিত’।
এমআরএম