করোনাভাইরাসে মহামারির চেয়ে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, মারা যাচ্ছেন শত শত মানুষ। এ কারণে ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যদিও বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির পরও একে এখনও মহামারির স্বীকৃতি দেয়নি সংস্থাটি। তবে খুব শিগগিরই এটি মহামারির চেয়েও বড় বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
সোমবার ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস এক ব্রিফিংয়ে বলেন, করোনা সংকটকে এখনও মহামারির চেয়ে বড় বিপর্যয় (প্যানডেমিক) বলার সময় আসেনি।
সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট এলাকা বা সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে তাকে মহামারি হিসেবে ধরা হয়। আর কোনও মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে তাকে প্যানডেমিক বলা হয়। করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘এই ভাইরাসের কি প্যানডেমিক হওয়ার সম্ভবনা আছে? অবশ্যই, আছে। আমরা কি সে পর্যন্ত পৌঁছেছি? আমাদের হিসাবে, এখনও নয়।’
কোনও মহামারিকে প্যানডেমিক বলা হবে কি-না তা নির্ভর করে এর বিস্তৃতির ধরন, সংক্রমণের হার, ভয়াবহতা প্রভৃতির ওপর। গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তৃতি এখনও দেখিনি, আর অনেক বড় হারে রোগের ভয়াবহতা বা প্রাণহানিও দেখা যায়নি।’
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে অন্তত ২ হাজার ৭০১ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত ৮০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু চীনেই প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬৬৩ জন। ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন বিশ্বের ৩৭টি দেশ ও অঞ্চলে। চীনের বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮৯৩ জন আক্রান্ত, মারা গেছেন আটজন। ইতালিতে আক্রান্ত ২২৯, প্রাণহানি সাতজনের। আর ইরানে অন্তত ৪৭ আক্রান্ত ও ১২ জন মারা গেছেন। এছাড়া জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রমোদতরী প্রিন্সেস ডায়মন্ডের ছয় শতাধিক যাত্রীর শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তবে সংক্রমণ বোঝাতে কোন শব্দটি ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণের সময় এটি নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার মতে, ‘এটা (নামকরণ) একটাও নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে না, অথবা আজ একটাও জীবন বাঁচাবে না। এখন সব দেশ, সম্প্রদায়, পরিবার ও ব্যক্তির প্রস্তুতির দিকে নজর দেয়ার সময়।’
নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব দেশকে তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। পাশাপাাশি, ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যেও জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া, ভাইরাস প্রতিরোধে যেসব দেশের পর্যাপ্ত সংস্থান নেই, তাদের এর হাঁত থেকে বাঁচাতে সক্ষম দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গ্যাব্রিয়েসুস।
এদিন চীনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাঠানো প্রতিনিধি দলের পাওয়া তথ্যও উপস্থাপন করেছেন সংস্থাটির প্রধান। তিনি জানান, চীনে ২৩ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এরপর থেকেই তা ধীরে ধীরে কমছে। কোভিড-১৯ রোগাক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তারা সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হচ্ছেন। আর যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের তিন থেকে ছয় সপ্তাহ লাগছে সুস্থ হতে। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো এই ভাইরাসে উৎস শহর উহানে মৃত্যুর হার সময়ভেদে দুই থেকে চার শতাংশ। এর বাইরে মৃত্যুর হার মাত্র ০.৭ শতাংশ।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
কেএএ/এমএস