করোনা সংকট: ঝুঁকিতে আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের প্রদর্শনী শিল্প
বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস আতঙ্কে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ২৪টিরও বেশি প্রদর্শনী ও সম্মেলন স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে। ফলে বড় সংকটে পড়েছে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের এ শিল্প। সামনে এই সংকট আরও গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। এর কিছুদিন পরেই চীনের মূল ভূ-খণ্ডের ভেতরে-বাইরে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গোটা হুবেই প্রদেশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এর প্রভাব পড়ছে বাণিজ্য খাতেও। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আংশিক চালু হলেও দেশটির বেশিরভাগ কল-কারখানা এখনও পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। কমেনি ভাইরাস সংক্রমণের হারও। ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চীনাদের জন্য সীমান্ত বন্ধ রেখেছে অনেক দেশ। এসবের জেরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য একাধিক বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোন প্রযুক্তি নিয়ে বৃহত্তম প্রদর্শনী ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ স্থগিত ঘোষণা করেন আয়োজকরা। আগামী ২৪ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্পেনের বার্সেলোনা শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বার্ষিক এ প্রদর্শনী। তবে বিটি, এলজি, নোকিয়া, সনি, ভোডাফোনের মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভাইরাস সংকটের মধ্যে প্রদর্শনীতে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে বাধ্য হয় আয়োজক জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ)।
এবারের বার্ষিক সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে তাদের বার্ষিক গ্লোব্যাল মার্কেটিং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এই সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা বলছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আগামী মাসে সান ফ্রান্সিসকোয় অনুষ্ঠিতব্য গেম ডেভেলপার কনফারেন্সও বাতিল করেছে তারা।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে ডেভেলপার সম্মেলন স্থগিত করেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আর গুগলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কারণে বিপদে পড়া হুয়াওয়ে তাদের নতুন সিস্টেম তৈরি এবং কৌশল নির্ধারণের অংশ হিসেবে ‘দ্য হুয়াওয়ে ডেভেলপার কনফারেন্স-২০২০’ সম্মেলনটির আয়োজন করেছিল। কিন্তু আগামী ২৭ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়। এখন ওয়েবকাস্টের মাধ্যমে এ সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে বেইজিং অটো শো-ও স্থগিত হয়েছে। আগামী এপ্রিলের শেষের দিকে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
১ হাজার ২০০টিরও বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের অংশগ্রহণে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সাংহাই ফ্যাশন উইক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এটিও স্থগিত করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ‘হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ক্যাফে এক্সপো’। তবে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এটি আগামী জুলাই মাসে আয়োজনের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন বন্ধ হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে হোটেল, এয়ারলাইন্স, বিনোদন, বিপণন, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য শিল্পেও।
বাণিজ্য, বিপণন ও প্রদর্শনী বিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর এক্সিবিশন ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের প্রধান নির্বাহী ক্যাথে ব্রেডেন বলেন, চলতি বছরান্তের আগে আমরা এর অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারব না। তবে সেটা যথেষ্ট বড় হবে নিশ্চিত।
ইভেন্টস ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল ও অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে এ খাত থেকে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। ওই বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে এর অবদান ছিল প্রায় ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাপী অন্তত ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ এতে কর্মরত ছিলেন।
ব্রেডেন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন স্থগিত করা জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন আয়োজকরা। এমনকি কিছু কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা না করার পেছনেও আর্থিক বিষয় জড়িত। কারণ সময়মতো কাঙ্ক্ষিত ভেন্যু না-ও পাওয়া যেতে পারে এবং এতে যথেষ্ট লোকসান হতে পারে।
সূত্র: সিএনবিসি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
কেএএ/পিআর