প্রকাশ্যে এল জামিয়ার লাইব্রেরিতে পুলিশের লাঠিপেটার ভিডিও
অনেকে গোল হয়ে বসে আছেন। বই পড়ছেন কেউ কেউ। ঠিক এমন মুহূর্তে লাইব্রেরিতে ঢুকলো পুলিশ। কেউ টেবিলের নীচে আবার কেউ আশ্রয় নিলেন দেয়ালে সেঁটে। তবে তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। কখনো মাথায় তো কখনও পিঠে এসে পড়লো লাঠির আঘাত। হাত তুলে মাথা বাঁচাতে গেলে সেই হাতেই এসে পড়ল এলোপাথাড়ি লাঠির ঘা।
দুই মাস আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি নির্যাতনের এমন ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে, লাইব্রেরিতে ঢুকে একতরফা তাণ্ডব চালাতে দেখা গেছে পুলিশকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও প্রকাশ করেছে।
লাইব্রেরির সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে খুঁজে পাওয়া ওই ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের শুধু মারধর নয়, লাঠি উঁচিয়ে গালিগালাজ করতেও দেখা গেছে পুলিশকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে গোটা ভারতে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তার অন্যতম অংশীদার ছিল দিল্লির এই নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়।
জামিয়ার শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ এক বিবৃতিতে এর তীব্র সমালোচনা করে জানিয়েছে, ‘এই ফুটেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নৃশংসতার প্রমাণ। এতে প্রমাণিত হয়, কীভাবে রাষ্ট্রের পোষা গুন্ডারা লাইব্রেরিতে ঢুকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে।’
আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ওই ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাদের অপরাধ দমন বিভাগ জামিয়া মিলিয়া কাণ্ডের তদন্ত করছে। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এ নিয়ে এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আপনারা দেখুন, দিল্লি পুলিশ কীভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করছে। একজন হাতে বই তুলে দেখানোর পরও তাকে লাঠিপেটা করছে পুলিশ। অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ) এবং দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তারা মিথ্যা বলেছিলেন যে, লাইব্রেরিতে ঢুকে কাউকে মারধর করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভিডিয়ো সামনে আসার পরও জামিয়ার ঘটনায় কারোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়া হলে, এই সরকারের অভিসন্ধি সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ সিএএ-এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন গত ১৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ দিল্লির জামিয়া এবং ওখলা এলাকা তুমুল বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার দিন এ ঘটনা ঘটে।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুাযায়ী, ওইদিন শতাধিক মোটরসাইকেল ছাড়াও অন্তত তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পুলিশ বাধা দিলে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভ কিছুটা কমলে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ ওঠে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু লাঠিপেটা নয়, গুলিও চালিয়েছিল পুলিশ। লাইব্রেরিতে ঢুকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল দিল্লি পুলিশ। গুলি চালানোর কথাও শুরুতে মানতে চায়নি তারা। তবে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলি চালাচ্ছেন এমন ভিডিও প্রকাশ্যে এল তা স্বীকার করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
Exclusive CCTV Footage of Police Brutality in Old Reading Hall, First floor-M.A/M.Phill Section on
— Jamia Coordination Committee (@Jamia_JCC) February 15, 2020
15/12/2019
Shame on you @DelhiPolice @ndtvindia @ttindia @tehseenp @RanaAyyub @Mdzeeshanayyub @ReallySwara @ANI @CNN @ReutersIndia @AltNews @BBCHindi @the_hindu @TheQuint @BDUTT pic.twitter.com/q2Z9Xq7lxv
এসএ/এমকেএইচ