করোনা সংকট: চীনে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের কারখানা বন্ধ
করোনাভাইরাস সংকটে এবার চীনে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার। সরকারি নির্দেশনার কারণেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভাইরাসের উৎসস্থল উহান থেকে প্রায় আটশ’ কিলোমিটার দূরবর্তী চাংশু শহরে অবস্থিত জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের এই কারখানাটি। সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠান চেরির সঙ্গে যৌথভাবে গাড়ি তৈরি করে তারা।
প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারে কর্মীদের স্বাস্থ্যই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চীনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাজ্য থেকে চীন ভ্রমণ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলছি। আর চীনে স্থানীয় সরকারের আদেশ অনুসরণ করে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
২০১৪ সালে চালু হওয়া চাংশু কারখানায় মূলত চীনা বাজারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জাগুয়ার এক্সই ও জাগুয়ার এক্সএফ মডেলের গাড়ি তৈরি হয়। এছাড়াও জাগুয়ার এক্সইএল, জাগুয়ার এক্সএফএল, জাগুয়ার ই-প্যালেস, ল্যান্ড রোভার ডিসকভারি স্পোর্ট, রেঞ্জ রোভার ইভকও তৈরি হয় এ কারখানায়। শুরু থেকেই কারখানাটিতে অন্তত দুই হাজার কর্মী কাজ করছেন।
সম্প্রতি জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার জানিয়েছে, ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে বেশ ভালো আয় হয়েছে তাদের। তবে পুরো অর্থবছরের আয়ের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
এর আগে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে হুন্দাই, টেসলা, ফোর্ড, নিসান, হোন্ডাসহ আরও কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ায় কারখানা বন্ধ হয়েছে হুন্দাইয়ের এবং জাপানে নিসানের। ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন শুধু চীনে বন্ধ রয়েছে। তবে যন্ত্রাংশ সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করায় শিগগিরই অন্যান্য দেশেও তা বন্ধ হতে পারে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম গাড়ি নির্মাণ শিল্প। কারণ বিশ্বের বেশির ভাগ ব্র্যান্ডই মোটর যন্ত্রাংশের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের উৎস ও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হুবেই প্রদেশের উহান শহর হচ্ছে দেশটির অন্যতম যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী এলাকা।
ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই অবরুদ্ধ রয়েছে এসব এলাকা। সেখানে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, কল-কারখানাও বন্ধ। ফলে যন্ত্রাংশের অভাবে চরম সংকটে পড়েছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মাত্র একটি যন্ত্রাংশের অভাবেই বন্ধ হতে পারে পুরো গাড়ির নির্মাণকাজ।
যন্ত্রাংশ স্বল্পতার কারণে গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ায় কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় হুন্দাই কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২৫ হাজার শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ছুটিকালীন আংশিক বেতন পাবেন তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার উলসানে বন্ধ করে দেয়া কারখানা থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখ গাড়ি তৈরি করে হুন্দাই। বিশ্লেষকরা বলছেন, হুন্দাইয়ের গাড়ি কারখানা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি এমন এক ঘটনা যার প্রভাব সারাবিশ্বে পড়বে। আর কারখানা বন্ধ থাকার কারণে হুন্দাইয়ের যে আর্থিক ক্ষতি হবে, তাও রীতিমতো বিস্ময়কর। এক হিসাবে দেখা গেছে, যদি পাঁচ দিনও কারখানাটি বন্ধ থাকে, তাহলে এর জন্য ৬০০ বিলিয়ন ওন (দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা) বা ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান গুনতে হবে হুন্দাইকে।
চীনে করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার উহানে একদিনে আক্রান্তের হার বেড়েছে ১২ গুণ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। এদিন চীনজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২৫৪ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেরই ২৪২ জন। এখন পর্যন্ত একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার চীনের হুবেই প্রদেশে মৃত্যুর মিছিলে আরও যোগ হয়েছেন ১১৬ জন। শুক্রবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রদেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৮২৩ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ হাজার ৯৮৬ জনে।
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৩ জন। আর আক্রান্ত হয়েছে ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।
সূত্র: বিজনেস লাইভ, ডেইলি মেইল, সিএনএন
কেএএ/এমএস