প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস একদিনে কেড়ে নিল ২৪৪ জনের প্রাণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২৭ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। একদিনে ২৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু। শুধু হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ২৪২ জন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫৭ জনে।

বৃহস্পতিবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রদেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১০ জনে। চীনের মূল ভূখণ্ডে মোট মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ১৩৫৫ জন। চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে দুজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

বুধবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও ১৪ হাজার ৮৪০টি ভাইরাস সংক্রমণের বিষয় নিশ্চিত করেছে, যা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থলে মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ২০৬ জন।

হুবেইতে ৩৩ হাজার ৬৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৩৩৭ জন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। ৩৩ হাজার ৪৪১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন এবং তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামক প্রমোদতরীতে। বিলাসবহুল ওই নৌযান তিন হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে এখন কোয়ারেন্টাইনে। বুধবার পর্যন্ত সেখানে থাকা ১৭৫ জনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মহামারি আকার ধারণ করে এই ভাইরাস। ভাইরাসটি চীনের ৩১ প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চল ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং প্রাণহানি বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় অধিকাংশ দেশ।

আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অনেক আগেই সার্স ভাইরাসকে ছাড়িয়েছে করোনা। ২০০২-২০০৩ সালে আট মাসের মধ্যে ২৫টি দেশে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন আট হাজার ৯৮ জন এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৭৪ জন।

বিশ্বের অনেক দেশই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো চীনগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

এদিকে শুধু উহান শহরেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা বলে করছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, নতুন এই করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহানের অনেক বাসিন্দা সংক্রমিত হলেও তারা জানেন না। ফলে আগামী দিনগুলোতে উহানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আক্রান্তের অনেক ঘটনাই হয়তো সামনে আসছে না। এ কারণে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসজনিত এই রোগের নামকরণ করেছে কোভিড-১৯। করোনার প্রথম দুই অক্ষর (CO), ভাইরাসের প্রথম দুই অক্ষর (VI), ডিজিজের (রোগ) প্রথম অক্ষর ডি (D) এবং ২০১৯ সালে ভাইরাসটির উৎপত্তি হওয়ায় তাতে ১৯ যোগ করেই কোভিড-১৯ নামকরণ করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

বিএ

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।