নওগাঁয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুদ মুক্ত ঋণের দাবি


প্রকাশিত: ০৪:২৯ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫

উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে বন্যায় নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় দুই হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ৭ হাজার মানুষ টিন দিয়ে ঘিরে বা বেড়ার ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে কষ্টে বসবাস করছেন।

দুই উপজেলায় বন্যায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট এবং কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।

দীর্ঘ দেড় মাস হলেও অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব মানুষদের। স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের কাছে দ্রুত সুদমুক্ত কৃষি ঋণ, বীজ, রাস্তাঘাট মেরামত, ভেঙে যাওয়া ঘর-বাড়ি পুননির্মাণ বা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলায় ২৩ আগস্ট ভোরে আত্রাই-নওগাঁ সড়কের মির্জাপুর নামক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার ভেসে যায় ৬/৭শ পুকুরের মাছ। দীর্ঘ দেড় মাস হলেও অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব মানুষদের। অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ঘরে খাবার না থাকায় খেটে খাওয়া ভূমিহীন এসব মানুষরা এখন কিভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

আত্রাই উপজেলার বহলা গ্রামের আজাদ হোসেন, আব্দুল গফুর, বিউটি বেগম জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ির আশেপাশে উঁচু জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে ঘর করে থাকতে হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার আকনা গ্রামের গফুর হোসেন, সামাদ হোসেন, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জব্বার শেখ, সুদেব কুমার  জাগো নিউজকে জানান, মাটির ঘর ভেঙে গেছে। মাটি দিয়ে দুইটি ঘর করতেও ত্রিশ হাজার মত করে টাকা লাগবে। সারা বছরের আয় দিয়ে জমিতে আমন ধান চাষ করেন। জমিতে ফসলও (ধান) নষ্ট হয়ে গেছে। কিভাবে ঘর-বাড়িগুলো তৈরি করবো।

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বর্গাচাষি প্রমোদ তরফদার জাগো নিউজকে জানান, এক বছরের জন্যে ১০ হাজার টাকা দরে ৫ বিঘা জামি বর্গা নেন। গত ইরি-বোর ধান ঘরে তুলে পারলেও ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এতে লোকসান গুণতে হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে ওই পাঁচ বিঘায় ধান লাগাতে গিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু বন্যায় সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আগামিতে ইরি-বোরো ধান কিভাবে চাষ করবেন আর পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবেন তাই নিয়েই দিশেহারা হয়ে গেছেন।

বহলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জাগাে নিউজকে জানান, এসব ক্ষতিগ্রস্ত শতশত লোকদের ঘরবাড়ি নির্মাণে সহযোগিতার পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Naogaon-Flood

রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক জানান, বন্যায় তাদের ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোর শতশত বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। সরকারি সামান্য সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামি কয়েক বছরেও এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না বলে জানান।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় দুই উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে কৃষি অধিদফতর থেকে আগাম ফসল সরিষা, ভুট্ট, শাক-সবজি লাগানো জন্যে পরামর্শ দেয়া শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভেঙে যাওয়া ঘর-বাড়ি পুনর্বাসণের জন্যে সরকারি সহযোগিতা রাখার পাশাপাশি পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে।

নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম জাগো নিউজকে জানান, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বন্যায় প্রায় দেড় থেকে দুইশ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। খেটে খাওয়া ভূমিহীন এসব মানুষদের সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার সামান্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।