করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে গণবিয়ের হিড়িক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

হাজারো যুগল, তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক। একদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক, অপরদিকে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি। কিন্তু কোনো বাধাই আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারল না। মহামারি করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে আজ শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী গণবিয়েতে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার যুগল।

Mass-Wedding

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স আর দৈনিক ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানী সিউলের উত্তরপশ্চিমের গ্যাপিঅংয়ের চেয়ং শিম পিস ওয়ার্ল্ড সেন্টারের আয়োজনে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। যাদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার যুগলই প্রথমবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। এ তথ্য দিয়েছেন আয়োজকরা।

Mass-Wedding

ইউনিফিকেশন চার্চের এই গণবিয়েতে অনেকে উপস্থিত হয়েছেন মাস্ক পরে। কারণ চীনের প্রতিবেশী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়াতেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ব্যাপকহারে বিস্তারের শঙ্কা করা হচ্ছে। চার্চ কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রিক অতিথিদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও মাস্কসহ নানান উপকরণ সরবরাহ করেন। সবার শরীরের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

Mass-Wedding

দুই মাস আগে চার্চের মাধ্যমে পরিচয় হয় চোই জি ইয়ং নামের এক তরুণীর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ওই তরুণী বলেন, ‘আমি খুব উচ্ছসিত যে, আমার আজ বিয়ে হচ্ছে।‘ তার মতো আরও অনেক যুগল আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে তাদের আনন্দ-উচ্ছাসের কথা জানান।

Mass-Wedding

গণবিয়ের অনুষ্ঠানে আগত ২১ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যদি বলি যে (করোনাভাইরাস) সংক্রমণের বিষয়ে আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই, তবে এটি মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু আমার আজ এটা মনে হচ্ছে, আজকের এই দিনে আমি পৃথিবীর সকল ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত।’

Mass-Wedding

তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির অনেকে যেমন মাস্ক পরেছেন তেমনি অনেকে আবার তা করেননি। এর পেছনে একেকজনের মতো একেকরকম। গণবিয়েতে অংশ নেওয়া ২৩ বছর বয়সী কনে নগুসেন মিঅংগুয়েত ওয়ালেহেত বলছেন, ‘আজ তো আমার বিয়ে। স্বামীর কাছে যেন সুন্দর লাগে, তাই আমি মাস্ক পরিনি।’

Mass-Wedding

ইউনিফিকেশন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুং মিয়ং মুন। তার প্রতিষ্ঠিত এই গির্জার অধীনেই এই গণবিয়ের আয়োজন। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তবে অতিরিক্ত জনসমাগম করোনাভাইরাসের বিস্তারের নেপথ্যে কাজ করতে পারে, এমন শঙ্কায় কনসার্ট, অভিভাবক সম্মিলন বাতিল করা হয়েছে এবারের আয়োজনে।

Mass-Wedding

বিশ্বের ৬৪টি দেশের প্রায় ৬ হাজার যুগল অভিন্ন পোশাক পরে অনুষ্ঠানে হাজির হন। যাদের মধ্যে অনেকেই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছিল। ঘটা করে অনুষ্ঠানস্থলে ছবি তোলেন নববিবাহিত দম্পতিরা। এছাড়া সেখানে উপস্থিত বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনরা তাদের অভিনন্দন জানান।

Mass-Wedding

চলতি বছর ইউনিফিকেশন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুং মিয়ং মুনের জন্মশতবর্ষ হওয়ায় জনসমাগম বেশি হবে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেখানকার কর্মকর্তা জাং ইয়ং চুল বললেন, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে এবারের উৎসবে অনেকের যোগ দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় ততটা জনসমাগম হয়নি।

Mass-Wedding

১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এ চার্চটি প্রতিষ্ঠা করেন মুন। ১৯৬১ সাল থেকে ২০০২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অধীনেই এ গণবিয়ে হতো। মাঝে মাঝে বড় বড় স্টেডিয়ামেও এই গণবিয়ের আয়োজন হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটনের গণবিয়েতে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার যুগল। এর দুবছর পর সিউল অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ২১ হাজার।

Mass-Wedding

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতোমধ্যে ২৪ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশী চীনে মৃতের সংখ্যা ৬৩০ ছাড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসের উৎসস্থল উহান সফর করেছেন এমন বিদেশিদের দেশে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সিউল।

এসএ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।