করোনাভাইরাস উত্তর কোরিয়ায় নেই কেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রায় দু'মাস হতে চললো। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, হংকংসহ বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশ বা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। আক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার, মারা গেছে ছয়শ’রও বেশি মানুষ।
তবে চীনের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার অবিচ্ছিন্ন সীমান্ত থাকা উত্তর কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হিসাবে ‘বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ’টি এখনও কীভাবে ভাইরাস সংক্রমণের বাইরে? সত্যিই কি তারা এতটা ভাগ্যবান? নাকি আসল ঘটনা গোপন রাখা হচ্ছে?
উত্তর কোরিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা না জানালেও কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের (এনআইএস) সাবেক প্রধান নাম সুং-উক দাবি করেছেন, আড়াই কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে অবশ্যই কেউ না কেউ এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশটির ৯০ শতাংশ বাণিজ্যই চীনের সঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে অসংখ্য লোক ট্রাকে বা ট্রেনে করে দু’দেশের সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করেছে। ফলে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সহজেই উত্তর কোরিয়াতেও পৌঁছে যাওয়ার কথা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সীমান্ত দিয়ে সব ধরনের পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে উত্তর কোরিয়া। ২০১৪ সালে ইবোলা সংক্রমণের সময়ও একই ব্যবস্থা নিয়েছিল পিয়ংইয়ং।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
গত ৩০ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংকটে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, মহামারিরোধী কার্যালয় খোলা হচ্ছে বেশ কয়েকটি। গত সোমবার তারা জানিয়েছে, ১৩ জানুয়ারির পর যারা দেশে ঢুকেছে তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
কেসিএনএ আরও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ‘দেশব্যাপী পরীক্ষার নমুনা পরিবহন ব্যবস্থা’ চালু করেছেন এবং সন্দেহজনক ঘটনা পরীক্ষা করতে পুরোপুরি সক্ষম।
বিজ্ঞাপন
তবে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ পিয়ংইয়ংয়ের উদ্বেগজনক ঘটনা পরীক্ষার ক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দেশটির প্রবল গোপনীয়তার কারণে তাদের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা বিশ্ব কখনোই জানতে পারবে না বলেও মনে করছেন তারা।
বিশ্বের অন্যতম স্বীকৃত গোপনীয় রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয় উত্তর কোরিয়া। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের আমলে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খবর বাইরে আসে না বললেই চলে। যেকোনও তথ্যের জন্য সবাই দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য গোপন সূত্রের ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যখাতও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৯০ সালের দুর্ভিক্ষের সময় দেশটিতে কত লোক মারা গিয়েছিল তা আজ পর্যন্ত পরিষ্কার বলেনি তারা। ধারণা করা হয়, সেই সময় অন্তত ২০ লাখ লোককে হত্যা করা হয়েছিল, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল তাদের পরিণতিও হয়েছিল ভয়াবহ।
বিজ্ঞাপন
হুন্দাই মোটর-কোরিয়া ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর কোরিয়ান হিস্টোরির পরিচালক জিন লি বলেন, উত্তর কোরিয়ায় সাধারণ ওষুধের সরবরাহ এত সীমিত যে, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রতিরোধমূলক ওষুধের দিকেই মনোনিবেশ করা উচিত। তারা কোনও মহামারি মোকাবিলা করতে পারবে না।
২০১১ সালে উত্তর কোরিয়া ছেড়েছেন পেশায় চিকিৎসক চোই জুং-হুন। তিনি জানান, ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে যখন হামের প্রকোপ মোকাবিলায় সহায়তা করেছেন, তখন উত্তর কোরিয়ার টানা ২৪ ঘণ্টা কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন চালানোর মতো ব্যবস্থা ছিল না।
বিজ্ঞাপন
ওই সময়ের কথা স্মরণ করে এই চিকিসৎক বলেন, সন্দেহজনক ঘটনা শনাক্তের পর চিকিৎসকরা রোগীদের কোনও হাসপাতালে বা কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় পাঠাতেন। তবে উত্তর কোরিয়ায় সমস্যা হচ্ছে, সেখানে এই নির্দেশনা মানা হয় না। হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় রোগীদের জন্য যখন পর্যাপ্ত খাবার পাঠানো হতো না, তখন তারা পালিয়ে যেতেন।
সূত্র: সিএনএন
কেএএ/টিটিএন/এমএস