করোনাভাইরাস : আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পর্যটন শিল্পে ধস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সাম্প্রতিক সময়ে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে আক্রান্ত রোগীদের পৃথক রাখা হচ্ছে।
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে একদিনেই আরও ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত চীনে প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে ২৪ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।
ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এ ধরনের জিনিসপত্রের সংকট তৈরি হচ্ছে। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি নিয়ত বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে পা রাখারও জায়গা হচ্ছে না। ওষুধ এবং চিকিৎসকের সংকটও বাড়ছে সেখানে।
এদিকে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের কারণে ধস নেমেছে পর্যটন শিল্পে। অনেক দেশই বলছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
এছাড়া অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে। চীনের উহান শহর থেকে অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। এই মুহূর্তে চীনে ভ্রমণ করলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পরতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বালি ট্যুরিজম এজেন্সি নামাজের আয়োজন করেছিল। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার গণ-নামাজের আয়োজন করা হয়। কর্মীদের সঙ্গে ওই এজেন্সির করকর্তারাও নামাজে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডও জানিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের সরাসরি প্রভাব পরেছে পর্যটন শিল্পে। বিশেষ করে চীন থেকে আসা লোকজনের ওপর অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশই চীনের উহান শহরের সঙ্গে ফ্লাইট যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পর্যটকরা এসব দেশে ভ্রমণ করতে পারছেন না।
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে প্রতি বছর চীন থেকে প্রচুর মানুষ আসা-যাওয়া করে। কিন্তু সাম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে লোকজনের অন্য দেশে ভ্রমণ যেমন কমে গেছে তেমনই অন্যান্য দেশ থেকেও চীনে সফর বাতিল করা হচ্ছে। বর্তমানে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ হলো: ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর,থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, লাওস, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম।
ইতোমধ্যেই অনেক দেশই বিশেষ বিমানে করে নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রতি ফিলিপাইনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন। এছাড়া আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস।
টিটিএন/পিআর