করোনাভাইরাসের ভয়াবহ থাবা পড়ছে আকাশপথে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
উহানের করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাবের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মাঝে গত চার বছরের মধ্যে চীনের শেয়ার বাজারে সর্বনিম্ন পতন ঘটেছে সোমবার। ওইদিন দেশটির শেয়ারবাজারে সূচকে ৮ শতাংশ পতনের রেকর্ড করা হয়েছে। মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত চীনের শিল্পখাতগুলোর মধ্যে সম্ভবত পর্যটন খাতের মতো কঠোর আঘাত আর কোনও খাতে পড়বে না।
মার্কিন বহুজাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক সিটিগ্রুপের বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে চীনের হোটেলগুলোতে বুকিংয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে গেছে। চীনে নভেল করোনাভাইরাসে (২০১৯-এনসিওভি) আক্রান্ত হয়ে গত ৯ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যুর পর দেশটির সর্ববৃহৎ তিনটি বিমানসংস্থা এয়ার চায়না, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এবং চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের শেয়ারে ২০ শতাংশের বেশি পতন ঘটেছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে প্রাণ গেছে অন্তত ৪২৫ জনের। চীনের সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বের ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এছাড়া চীনের বাইরে প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনে রোববার করোনায় আক্রান্ত একজন এবং মঙ্গলবার হংকংয়ে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
চীনা বিমান খাতের বিনিয়োগকারীরা এই মুহূর্তে বেশ বিচলিত। অতীতের কিছু মহামারির সময় দেশটির আকাশ পরিবহন খাতে ব্যাপক যাত্রী সঙ্কট দেখা দেয়। ২০০৩ সালে দেশটিতে সার্সের মহামারির সময় এশিয়ান এয়ারলাইন্সের মাসিক যাত্রী কমে যায় প্রায় ৩৫ শতাংশ।
এছাড়া হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিকের যাত্রী কমে প্রায় ৮০ শতাংশ। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি রুপে হাজির হওয়া প্রাণঘাতী ইবোলার বিস্তারের সময়ও বিমান পরিবহন খাতের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। আফ্রিকার দেশ সিয়েরালিয়নে সেই সময় বিমানের যাত্রী হ্রাস পায় ৯৩ শতাংশ।
অতীতের মহামারির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ইবোলা এবং সার্স আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থাগুলোর ওপর কঠোর আঘাত হেনেছিল। প্রাদূর্ভাব শুরুর পর বিমান চলাচলে যে যাত্রীসঙ্কট শুরু হয়; তা স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায় প্রায় ৭ থেকে ৯ মাস।
কিন্তু ২০১৫ সালে সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস গোত্রীয় মার্স এবং ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের চেয়ে এশিয়ায় সার্সের প্রাদূর্ভাবের ক্ষত ছিল বেশ গভীর। তবে ইবোলার প্রাদূর্ভাব আকাশপথের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছিল। ওই সময় যাত্রী পরিবহন ব্যাপকহারে কমে যায় এবং প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মহামারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে।
সাধারণত এ ধরনের ভাইরাসের বিস্তারের সময় পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত স্থানগুলো থেকে পুরোপুরি দূরে থাকার চিন্তা করেন। বিশ্বব্যাংক বলছে, যেকোনও প্রাদুর্ভাবের সময় ৯০ শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয় সাধারণ জনগণের সংক্রমণ এড়ানোর অযৌক্তিক উপায় বেছে নেয়ার কারণে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংস্থা বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদের প্রধান টিফানি মিশরাহী বলেন, ইবোলার প্রাদুর্ভাব আফ্রিকার পর্যটন খাতে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। এই মহাদেশের যেসব দেশ ইবোলা সংক্রমণের বাইরে ছিল তাদের পর্যটনেও প্রভাব পড়েছিল।
ইবোলার প্রাদুর্ভাব থেকে ৩ হাজার মাইলেরও বেশি দূরের দেশ তানজানিয়ায় সেই সময় ইবোলায় আক্রান্ত একজন রোগীও সনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে ২০১৪ সালের অক্টোবরে দেশটিতে হোটেল বুকিং কমে যায় প্রায় ৫০ শতাংশ। সার্সের বিপজ্জনক বিপর্যয় এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য মহাদেশেও পৌঁছেছিল। সার্সের প্রাদুর্ভাবের কারণে উত্তর আমেরিকায় আকাশপথে যাত্রী চলাচল কমে যাওয়ায় বিমানসংস্থাগুলো দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। এমনকি এই ধাক্কা সামলে ওঠার জন্য বিভিন্ন বিমান সংস্থা একীভূত হয়ে যায়। যদিও টুইন টাওয়ারে ৯/১১'র সন্ত্রাসী হামলার জেরে এসব বিমানসংস্থা আগে থেকেই মন্দার কবলে পড়ে আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুধু তাই নয়, চীনা ছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিক; যারা সম্প্রতি চীন সফর করেছেন তাদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। যে কারণে বিশ্বের পর্যটন শিল্পের ওপর আবারও বড় ধরনের আঘাত পড়তে যাচ্ছে। সোমবার বিশ্বের অন্যতম বিমান পরিবহনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত বলছে, বেইজিংয়ের বাইরে তারা চীনে সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
এসআইএস/পিআর