করোনাভাইরাস : ত্রুটির কথা স্বীকার করল চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ৪২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া আরও প্রায় ২০ হাজার ৪৩৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে আরও ২৩টি দেশে কমপক্ষে আরও ১৫১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের ভুল এবং সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে চীন। দ্য পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি জানিয়েছে, জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের আরও উন্নতি করতে হবে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণীর বাজারগুলোতে বড় ধরণের অভিযান চালানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।
দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, শুধুমাত্র সোমবারই হুবেই প্রদেশে মারা গেছে আরও ৬৪ জন। ওই প্রদেশটি থেকেই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করা হয়।
চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে হংকংয়ে একজন এবং ফিলিপাইনে একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, এই ঘটনা চীনের সরকারি সিস্টেমের জন্য একটি বড় পরীক্ষা যা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি মোকাবিলায় ভুলত্রুটি আর ঘাটতি চোখে পড়েছে। জরুরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করতে হবে এবং জরুরি বিপজ্জনক কাজগুলো মোকাবিলায় আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
একই সাথে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং এজন্য বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি প্রতিরোধে কর্মকর্তাদের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে এবং যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে তাদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
এর মধ্যে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত এক কিশোরের মৃত্যুর পর দুজন কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই কিশোরের বাবাকে করোনাভাইরাস সন্দেহভাজন হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার পর ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। বাবা ছাড়া তাকে দেখভালের আর কেউ ছিলনা।
এদিকে, সোমবার একদিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর করোনাভাইরাসে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
উহানে দ্রুত গতিতে দুটি নতুন হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রদেশের সব মানুষের জন্যই মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে উপকরণ সংকট আছে এবং সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক মুখপাত্র বলেন, চীনের এ মূহুর্তে জরুরিভাবে মেডিকেল মাস্ক, প্রটেকটিভ স্যুট ও নিরাপত্তা চশমা দরকার। অপরদিকে সাংহাইয়ের মতো কিছু শহরে নতুন বছরের ছুটি বাড়ানো হয়েছে, বন্ধ আছে স্কুলগুলোও।
আবার হংকংয়ে পনের জন্য আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটি চীনের সাথে ১৩টি সীমান্ত পথের দশটিই বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশই সম্প্রতি চীনের আক্রান্ত এলাকা থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে।
নিজের নাগরিকদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও চীন একে অতিরিক্ত আখ্যায়িত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভীতি ছড়ানোর অভিযোগ করেছে।
কতটা প্রাণঘাতী এই ভাইরাস?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উহানে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজারের মতো। কিন্তু চীন সরকার এই তথ্য গোপন করছে।
ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের এক পরিসংখ্যান বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে আক্রান্তের যে সংখ্যা বলছে কর্তৃপক্ষ, আসল সংখ্যা তার চেয়ে বহুগুন বেশি হতে পারে।
লানচেট মেডিকেল জার্নাল বলছে, যারা মারা গেছেন তারা শুরুর দিকেই আক্রান্ত হয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, প্রথম ৯৯ রোগীকে উহানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে ৪০ জনের হৃদযন্ত্র দুর্বল ও রক্ত পরিবাহী শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আবার ১২ জনের ডায়াবেটিস ছিল। তবে চীনের একন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ থাকলে সুস্থ হওয়ার জন্য এক সপ্তাহই যথেষ্ট।
টিটিএন/পিআর