চীনে কুকুর বিড়ালের পর মুরগি নিধনের হিড়িক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৫ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
একেই বুঝি বলে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’। নভেল করোনাভাইরাস নামে সার্স গোত্রীয় এক ভাইরাসে সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ মারা গেছে চীনে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় আঠারো হাজার মানুষ। এরমধ্যে দেশটিতে বার্ড ফ্লু ছড়িয়েছে। আতঙ্কিত চীনারা পোষা কুকুর বিড়াল হত্যার পর এবার হাজার হাজার মুরগি নিধন শুরু করেছে।
গতকাল চীনের কৃষি ও গ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়, এইচ৫এন১ ভাইরাসজনিত বার্ড ফ্লু দেখা দিয়েছে দেশটির হুনান প্রদেশের শুয়াংকিং জেলা শহরের একটি পোল্ট্রি ফার্মে। পাখি থেকে মানবদেহে সংক্রমণের এ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ওই প্রদেশে নিধন করা হয়েছে ১৭ হাজার ৮২৮টি মুরগি।
করোনাভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের দক্ষিণ-সীমান্তে অবস্থিত হুনান প্রদেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই নিধন প্রক্রিয়া চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কৃষি ও গ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ওই খামারে ৭, হাজার ৮৫০টি মুরগি ছিল। এরমধ্যে সাড়ে চার হাজার মুরগি ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর ওই এলাকার প্রায় মুরগি নিধন করে প্রশাসন।
যদিও মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো মানব-সংক্রমণের (হিউম্যান এইচ৫এন১ ভাইরাস) খবর পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসের মোকাবিলা নিয়ে এমনিতেই বিশ্বের কাছে সাহায্যের আকুতি জানিয়েছে চীন। ঠিক এমন সময়ে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর চীনকে আরও বিপদে ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এইচ৫এন১ ভাইরাসের কারণে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। এটি বার্ড ফ্লু নামেই পরিচিত। ২০১৫ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। তবে এটি অন্যান্য প্রাণঘাতী ভাইরাসের তুলনায় কিছুটা দুর্বল বলে ধারণা করা হয়।
ভাইরাসটি কেবল চীনেই নয়, ভারতেও ছড়ানোর খবর মিলেছে। গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থার (ওআইই) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছত্তিশগড়ের একটি পোল্ট্রি ফার্মে এ ভাইরাসজনিত বার্ড ফ্লু আক্রমণ করলে ২১ হাজার ৬০টি মুরগির মধ্যে ৫ হাজার ৬৩৪টি মারা যায়। পরে বাকিগুলোকে নিধন করা হয়।
এদিকে হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে নতুন এক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে চীনাদের মধ্যে। ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে, এমন গুজব ছড়ানোর পর চীনারা তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে বহুতল ভবন থেকে ছুড়ে মারছেন। দেশটিতে যত্রতত্র পোষা কুকুর বিড়াল মরে থাকতে দেখা গেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক সান এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে, গোটা চীন এখন এক মহাসঙ্কটে। শুধু হুবেই নয় চীন ছাড়াও বিশ্বের বিশটির বেশি দেশে এখন এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। কিন্তু চীন থেকে এমন কিছু ছবি পাওয়া গেছে যা মর্মান্তিক। কুকুর-বিড়ালের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রাস্তায়।
রোববার প্রকাশিত সচিত্র ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের তিয়ানজিন নামক শহরে একটি আবাসিক এলাকার রাস্তায় মরে পড়ে আছে একটি পোষা কুকুর। বহুতল ভবন থেকে পোষা ওই প্রাণীটিকে কেউ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। যার গোটা শরীর রক্তাক্ত।
চীনের আরেক বড় শহর সাংহাই। ওই শহরেও এমন ঘটনা ঘটেছে একাধিক। শহরের এক রাস্তায় একসঙ্গে পাঁচটি পোষা বিড়াল রক্তাক্ত অবস্থায় মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষ তার প্রিয় পোষা প্রাণীগুলোকে ঘর থেকে বের করতে এভাবেই ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে রাস্তায়।
পোষা প্রাণীর মাধ্যমে মানুষও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে এমন গুজব সম্বন্ধে সচেতন করতে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া (হু) একটি নোট প্রচার করছে। তাতে লেখা আছে, ‘কুকুর ও বিড়ালের মতো অন্যান্য পোষাপ্রাণী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।’
এসএ/এমএস