আরব লীগের পর ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ প্রত্যাখ্যান ওআইসির
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’ নামে যে রূপরেখা প্রকাশ করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলিম দেশগুলোর বৈশ্বিক জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এর আগে গত শনিবার আরব দেশসমূহের জোট আরব লীগ ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।
কথিত ওই শান্তি পরিকল্পনার পর ৫৭ রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এই মুসলিম জোট সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে সোমবার এক জরুরি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে বিবৃতিতে ওআইসি জানিয়েছে, তারা জোটের সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত না হওয়া এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মার্কিন প্রশাসনকে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিন নেতৃত্বের অনুরোধে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে ওআইসি। এর দুদিন আগে গত শনিবার একইভাবে এক জরুরি বৈঠক শেষে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তা বাস্তবায়নে কোনোভাবে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানায় ২২ আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট আরব লীগ।
এর আগে গতকাল রোববার ওআইসি এক টুইটার বিবৃতিতে ঘোষণা দেয়, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে জোটের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে মার্কিন প্রশাসনের ঘোষিত ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা করে জোটের অবস্থান জানানো হবে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনে ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’ নামে গত মঙ্গলবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে রূপরেখা উন্মোচন করেছেন সেটাকে একপাক্ষিক অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আরব লীগ। মিসরের রাজধানী কায়রোতে জরুরি বৈঠক শেষে গত শনিবার এই জোট ট্রাম্পের চুক্তিটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ বললেও আরব জোট তাদের বিবৃতিতে চুক্তিকে ‘শতাব্দীর সেরা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ট্রাম্পের মস্তিষ্ক উৎসারিত এই চুক্তিকে একপাক্ষিক অভিহিত করে জোটটি বলছে, ট্রাম্পের ওই চুক্তিতে ফিলিস্তিনের মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।
কথিত এই শান্তি চুক্তি কোনোভাবেই শান্তির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়নি আর এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনোভাবেই মার্কিন প্রশাসনকে সহায়তা না করার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। ইসরায়েল ক্ষমতার জোরে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারবে না এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই সংকট সমাধানে দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে জোটটি।
পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। কিন্তু হোয়াইট হাউসে হাস্যোজ্জ্বল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ‘অবিভক্ত রাজধানী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ইসরায়েল সাধুবাদ জানালেও ফিলিস্তিন এই চুক্তি আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনাটিতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একের পর কঠিন শর্ত পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প।
চার মহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ নিয়ে ওআইসি গঠিত। জাতিসংঘের পর এটাই বিশ্বের বৃহৎ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা প্রায় দুইশ কোটি। অধিকাংশ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যার কিছু আফ্রিকান ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশও এই জোটের সদস্য।
অপরদিকে ওআইসির অংশ হিসেবে ২২টি আরব দেশ নিয়ে আরব লীগ গঠিত। তবে আরব বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হলেও এই জোটে আরব অঞ্চলের বাইরেও কিছু সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। এগুলো হলো তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরান। এছাড়া রাশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ আরও পাঁচটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র রয়েছে এই আরব লীগে।
এসএ/এমএস