করোনাভাইরাস আতঙ্ক : খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় মজুতের হিড়িক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের লাগামহীন বিস্তারে আতঙ্কিত হংকংয়ের বাসিন্দারা মুহূর্তের মধ্যেই শহরের প্রধান প্রধান সুপারমার্কেটগুলোর তাক খালি করে ফেলেছেন। মূল ভূখণ্ডে করোনাভাইরাসের মহামারি বাড়তে থাকায় চীনের বিশেষ এই অঞ্চলের বাসিন্দারা মাংস, চাল, সাবান ও অন্যান্য পরিষ্কারক দ্রব্য-সামগ্রী মজুত করতে শহরের সুপারমার্কেটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় ৭৪ লাখ মানুষের এই শহরে এভাবে খাদ্য-সামগ্রী মজুদের ঘটনা নজিরবিহীন। তারা বলছেন, ২০০৩ সালে সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স) মহামারির সময় যে ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল; এবার তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সার্সে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৮০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। শুধুমাত্র হংকংয়েই এই ভাইরাসে প্রাণ যায় প্রায় ৩০০ জনের।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম নতুন এই নভেল করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনেই ৩৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার ২০৫ জন।
সপ্তাহের শুরুতে হংকংয়ের বিভিন্ন দোকানে মুখোশ, ভিটামিন সি-সহ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। হংকংয়ের ওয়ান চিই জেলার একটি প্রধান সুপারমার্কেট শুক্রবার সকালের দিকে খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাংস ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার এবং শাক-সবজি শেষ হয়ে যায়।
খুচরা পণ্য-সামগ্রী নির্বাহী সিন্ডি-ও সুপারমার্কেটে এসেছেন শুকনা খাবার ও সাবান কেনার জন্য। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, আসলেই প্রত্যেকেই চিন্তিত। আমার ধারণা, আগামী কয়েকদিন কি ঘটবে সেটা নিয়ে সবাই খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত্র। খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর দামও বাড়ছে।
মুখোশ পরিহিত কয়েক ডজন দোকানি হ্যান্ডওয়াশ এবং অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি ট্রলিগুলো টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্যরা দোকানে অবশিষ্ট চালের ব্যাগ এবং নুডলসের প্যাকেট তাকে সাজানোর চেষ্টা করছেন। খাদ্য-সামগ্রী এবং পরিষ্কারক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে স্থানীয় দোকানিরা বলছেন, যেকোনও সময় চীনা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন মানুষ খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হুমড়ি খেয়ে মজুত করছেন।
হংকংয়ের সরকারি তথ্য বলছে, বাসিন্দাদের খাদ্য-সামগ্রীর প্রায় ৯০ শতাংই মূল ভূখণ্ড চীন থেকে আমদানি করতে হয়। উহানের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইতোমধ্যে হংকং সরকার চীনের সঙ্গে দ্রুতগতির ট্রেন ও কিছু সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
সোমবার হংকংয়ের মেডিক্যাল কর্মীরা চীনের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন। হংকংয়ে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৫ জন রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে মূল-ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের জোরাল দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের মহামারির সময় হংকংয়ের অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হয়। ওই সময় পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকহারে কমে যাওয়ায় পর্যটন ও অন্যান্য সেবা খাতে বেকারত্ম চরম আকার ধারণ করে। সার্সের কড়াল হ্রাসে হংকংয়ে ২০০৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয় মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। ওই বছর খুচরা বিক্রির পরিমাণ ০ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়।
গত সপ্তাহে হংকংয়ের কাউলুনের এলিমেন্ট সুপারমার্কেট সকালের দিকে চালু করা হয়। এই মার্কেট চালুর কিছুক্ষণের মধ্যে খাদ্য-সামগ্রী ও অন্যান্য পণ্য দ্রুত বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এছাড়া ব্রিটিশ মার্ক অ্যান্ড স্পেনসারের আউটলেটে মুরগী শেষ হয়ে যায় দুপুরের আগেই।
নেলসন নামের এক ক্রেতা রয়টার্সকে বলেন, এটা খুবই উদ্বেগজনক যে খাবারের মজুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে ভয়াবহ অবস্থা হলো, মুখোশ এবং স্যানিটাইজারগুলোও দ্রুত বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এত ভয়াবহ মাত্রায় বিরাজ করছে যে, গত শুক্রবার হংকংয়ের স্থানীয় একটি হাসপাতালের ৫৬ বছর বয়সী কর্মচারীকে কর্মস্থল থেকে মুখোশ এবং গ্লাভস চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এসআইএস/পিআর