চালু হচ্ছে চীনের আরও একটি হাসপাতাল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আরও একটি নতুন হাসপাতাল চালু করতে যাচ্ছে চীন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর আগেই নতুন দু'টি হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল দেশটি। সে অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই একটি হাসপাতাল চালু হয়েছে এবং সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে।
২৫ হাজার স্কয়ার মিটারের হুওশেনশান হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। আগামীকাল (সোমবার) হাসপাতালটি চালু হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল নির্মাণে কয়েক ডজন ক্রেন দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এর আগে হুয়াংঝু জেলায় নির্মিত প্রথম হাসপাতাল ভবনটি মূলত হুয়ানগ্যাং সেন্ট্রাল হাসপাতালের একটি নতুন শাখা। এটি আগামী মে মাসে চালু করার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ওই হাসপাতালকেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।
বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসের এই প্রকোপ সার্সের রোগের প্রাদুর্ভাবকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস ২৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে নতুন ভাইরাসে মৃত্যুর হার সার্সের তুলনায় অনেক কম, যার ফলে কর্মকর্তারা বলছেন যে, এটি তেমন মারাত্মক নয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, সরকারি পরিসংখ্যানগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে তার তুলনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কেন্দ্রস্থল উহান শহরে ৭৫ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতে পারে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২৭টি দেশে এই ভাইরাসে ১৪ হাজার ৫শ ৫১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই চীনের হুবেই প্রদেশের। এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করার পরই হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চীন।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হুওশেনশান হাসপাতালটি এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট। ওই হাসপাতালের নির্মাণকাজ সরাসরি সম্প্রচার করছে চীনের সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি)।
গ্লোবাল টাইমস নিউজপেপার বলছে, ৪০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ওই ভিডিও দেখেছে। কম সময়ের মধ্যে দ্রুত বড় ধরনের নির্মাণকাজে বরাবরই রেকর্ড করে আসছে চীন।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ চীন থেকে আগতদের ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সাম্প্রতিককালে চীনে অবস্থানরত কোনো বিদেশি ভ্রমণকারীকে তারা নিজ দেশে প্রবেশ করতে দেবে না। এর আগে, রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান এবং ইতালিসহ কয়েকটি দেশ একই ধরণের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ জাতীয় পদক্ষেপ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ভালোর চাইতে ক্ষতি বেশি করবে। কেননা এতে তথ্য আদান-প্রদান, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
টিটিএন/এমএস