করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাঁচামালের বাজারেও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে বিশ্বের কাঁচামালের বাজারেও। এরই মধ্যে চাহিদা কমে গেছে ব্যাপক হারে, প্রাণহানি বাড়তে থাকলে যেকোনও সময় কাঁচামাল সরবরাহ পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত চীনে অন্তত ১৭০ জন মারা গেছেন। চীন সরকারের তথ্য বলছে, দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৭ হাজার ৭১১ জন। চীন ছাড়াও আরও অন্তত ১৮টি দেশে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সংক্রমণের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হবে কি না সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনাভাইরাসের প্রভাবের ঝুঁকিতে কোন কাঁচাবাজার?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত তিন মাসের মধ্যে তেলের দাম সবনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার সময়সীমা আরও দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা করতে হচ্ছে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেককে। অন্তত জুন মাস পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রয়োজনে সেটি আরও বাড়ানো হতে পারে।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তেল পরিশোধনকারী চীন বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। সুতরাং দেশটির অর্থনীতিতে যেকোনও ধরনের উপাদান সংকট দেখা দিলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে অন্যান্য খাতেও।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এরই মধ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে চীনের বিমানপরিবহন খাত। উহানের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। যেসব যাত্রী চীনে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকেট কিনেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে অন্যান্য বিমানসংস্থাগুলোও।
ফলশ্রুতিতে এশিয়ায় জেট ফুয়েলের উৎপাদন ও দাম দু'টিই কমে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিশোধনকারী ও তেল রফতানিকারকরা। এছাড়া চীনের অনেক এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করায় গ্যাসোলিনের চাহিদাও কমে গেছে ব্যাপক হারে। এশিয়া অঞ্চলে এর স্বাভাবিক দাম কমে দাঁড়িয়েছে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে।
ক্ষতি অন্য বাজারেও
চীনে প্রধানত বিভিন্ন ক্যাটারিং কোম্পানি এবং ফুডকোর্টে পাম অয়েল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দেশটির বিভিন্ন অফিস-শপিংমল বন্ধ রাখার সময়সীমা আরও দীর্ঘস্থায়ী করার ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার এর দাম বেড়েছে অন্তত ১০ শতাংশ। ভারতের পর চীনই পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক।
এছাড়া, দেশটিতে কল-কারখানা বন্ধের সময়সীমা বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধাতু (তামা, টিন, দস্তা) শিল্পও। বিশ্বের সর্বোচ্চ ধাতু ব্যবহারকারী দেশটিতে তামার দাম গত চার মাসের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে চীনে প্রায় অর্ধেক আউটলেট বন্ধ ঘোষণা করেছে জনপ্রিয় মার্কিন কফি কোম্পানি স্টারবাকস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত দুই হাজার আউটলেট বন্ধ রাখবে তারা। একইভাবে ভ্রমণ ও আউটলেট খোলা রাখার সময়সীমা সীমিত করেছে প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। গত সপ্তাহে প্রথম মার্কিন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফেসবুক তাদের কর্মীদের চীন ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
বুধবার জাপানি গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা জানিয়েছে, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনে তাদের সব কারখানা বন্ধ থাকবে। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিন ও দক্ষিণের গুয়ানডং প্রদেশে টয়োটার বড় কারখানা রয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শহরে পরিবহন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে টয়োটা।
চীনের অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের বাসায় বসে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছে। অনেকেই ছুটি বাড়িয়েছে। কেউ ভাইরাস সংক্রমিত এলাকা ভ্রমণ করলে তাকে আপাতত কর্মস্থলে না আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ ও দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বন্ধ রয়েছে।
তবে এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ‘সেফ হ্যাভেন’ হয়ে উঠেছে স্বর্ণ। অন্য সবখানে ধস নামলেও গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে চলছে স্বর্ণের বাজার।
সূত্র: রয়টার্স।
কেএএ/এসআইএস/এমকেএইচ