‘ট্রাম্পের শতাব্দি সেরা চুক্তি বেলফোর ঘোষণার চূড়ান্ত ধাপ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

‘শতাব্দির সেরা চুক্তি’ নামে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনাকে ‘নতুন বেলফোর ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনিরা। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে বহুল আলোচিত এই শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় দেশের জন্য এই প্রস্তাবকে উইন-উইন সলিউশন হিসেবে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করবে। ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে থাকবে জেরুজালেম। এটা ইতোমধ্যে করা হয়েছে।

নতুন এই পরিকল্পনা খুব শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। শতাব্দির সেরা চুক্তি প্রকাশের দিনে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী তেলআবিবের সুরক্ষা নিশ্চিতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকায় ইসরায়েলি আইনের বাস্তবায়ন করা হবে।

এর আগে, ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকায় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। অনেকেই তথাকথিত এই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কর্মী ফখরি আবু দিয়াব আলজাজিরাকে বলেন, যার মালিকানা নেই, তার হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি (ট্রাম্প), যাদের কোনও অধিকারও নেই। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, নতুন বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছেন।

ইহুদিদের জন্য নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেনের অঙ্গীকারের পর ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ‘বেলফোর ঘোষণা’ দেয়া হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস আর্থার বেলফোর ওইদিন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য কথিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্রিটেনের অবস্থানের ঘোষণা দেন।

ব্রিটেনের এই অঙ্গীকারকে ফিলিস্তিনিদের ওপর নেমে আসা বিপর্যয়ের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে দেখা হয়। ব্রিটেনের এই ঘোষণার পর কমপক্ষে সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি আরব বিশ্বে গণবিতাড়নের শিকার হন। আধুনিক আরব বিশ্বের ইতিহাসে ব্রিটেনের এই বেলফোর ঘোষণা সবচেয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

আবু দিয়াব বলেন, ট্রাম্পের এই চুক্তিতে শুধুমাত্র ইসরায়েলি স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ঘটেছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র, জেরুজালেম এবং জর্ডান উপত্যকার প্রধান স্তম্ভেরও লঙ্ঘন করেছেন ট্রাম্প। কয়েক দশক ধরে এই উদ্দেশ্যে আমাদের জীবন উৎসর্গ করার পর, আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই; শুধুমাত্র কিছু অর্থনৈতিক লাভ চাই না।

তিনি বলেন, আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি এবং এটার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। গত বছরের জুনে বাহরাইনে এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে এই চুক্তির ব্যাপারে জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে ওই সম্মেলনে ফিলিস্তিনে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেন তিনি।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্সের সাবেক মন্ত্রী জিয়াদ আবু জায়েদ বলেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই প্রস্তাব মেনে নেয়া একেবারেই অসম্ভব। তিনি বলেন, আমরা জেরুজালেমকে কখনই ছেড়ে দেব না। জেরুজালেম আমাদের রাজধানী। এমনকি পশ্চিম তীর এবং জর্ডান উপত্যকাকেও ছেড়ে দেব না।

আবাু জায়েদ বলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার কেড়ে নেয়ার অধিকার ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর নেই। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ফিলিস্তিনের রাস্তায় তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন তিনি। নেসেটে ফিলিস্তিন বিষয়ক সদস্য সামি আবু শাহাদা বলেন, এই পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ চলমান আছে।

তিনি বলেন, ঘোষণার অনেক আগে থেকেই এই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে গত বছর তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া এবং গোলান মালভূমি দখলে নেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এই চুক্তির ঘোষণা দেয়ার পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতাদের জরুরি বৈঠকে তলব করেন। এই বৈঠকে পশ্চিম তীরের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতিনিধিদেরও ডাকেন তিনি। হামাস ট্রাম্পের এই চুক্তির যেকোনও বাস্তবায়ন পুরোমাত্রায় প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।

বৈঠকের পর রামাল্লাহ থেকে মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের এই প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে না। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন বিক্রি করার জন্য নয়। শতাব্দি সেরা চুক্তি ময়লার ঝুঁড়িতে নিক্ষিপ্ত হবে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে আলোচনা করতে চাইলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি আছে বলে জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাস।

ফিলিস্তিনি এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বেলফোর ঘোষণার চূড়ান্ত ধাপ হলো এই চুক্তি। ফাতাহর মূল কমিটির সদস্য আজ্জাম আল-আহমদ বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আরব লীগের জরুরি বৈঠকের প্রস্তাব করেছে। আগামী শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

হোয়াইট হাউসে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিু পরিকল্পনা প্রকাশের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতদের পাঠানোয় বাহরাইন, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।