পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যানকে গলা কেটে হত্যা


প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। সোমবার রাত ৯টায় মধ্যবাড্ডার জ-১০/১ নং বাড়ি থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, মধ্যবাড্ডার জ-১০/১ নং বাড়ির দ্বিতীয়তলায় ওই খুনের ঘটনা ঘটে। পিডিবির সাবেক এ পরিচালক বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি।


তিনি আরো জানান, রহমতিয়া খানকা শরিফ পরিচালনা করতেন দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত খিজির খান। ঢাকা অফিসের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার বাসার তিন তলায় খানকাহ রহমতিয়া খানকা শরীফটি অবস্থিত। রহমতিয়া খানকায় আসা কেউ এই খুনের সঙ্গে জড়িত কী-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে হত্যা কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি ওসি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, তার বেশ কিছু মুরিদ ও ভক্ত রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মুরিদ ও ভক্তরা আসতেন। মুরিদদের মধ্যে কারো যোগসাজশে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে দাবি স্থানীয়দের। প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজ জানান, রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ৮-১০ জন ব্যক্তি ঘরে ঢুকে খিজির খানকে জবাই করে হত্যা করে। ছয়তলা ভবনের বাড়িটি খিজির আহমেদের নিজের। এর দ্বিতীয়তলায় খানকা শরিফ ছিল। তৃতীয়তলায় ছিল তার বেডরুম।


ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃঞ্চপদ রায়, গুলশান বিভাগের ডিসি এসএম মোস্তাক আহমেদ। পরিদর্শনের শেষে যুগ্ম কৃষ্ণপদ রায় জানান, রাতে চার থেকে ছয়জন দুর্বৃত্ত খিজিরের বাড়ির দ্বিতীয়তলার খানকা শরিফে এসে বসে। খিজির তাদের বসিয়ে রেখে নামাজ পড়তে গেলে দুর্বৃত্তরা তৃতীয়তলায় গিয়ে তার ছেলে এবং ছেলের বউকে হাত-পা-মুখ বেঁধে আবার দ্বিতীয়তলায় আসে। পরে দ্বিতীয়তলায় তিন কাজের মেয়েকেও একইভাবে বাঁধে তারা। অবশেষে খানকা শরিফের ওজুখানায় নিয়ে খিজিরের হাত পেছনের দিকে বেঁধে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।

কী কারণে ঘটনাটি কে বা কারা ঘটিয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় জানান, তদন্ত চলছে এখনই বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। এই ঘটনার সঙ্গে নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার কোনো মিল আছে কী-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এ ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, হত্যার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।


বাসার ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলামত সংগ্রহ করছেন সিআইডির ক্রাইম দলসহ গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, খিজির খানের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে। তার ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেন দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

জাগো নিউজের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খিজির খানের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। বাড়ির কয়েকজন সদস্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। খিজির নামাজ-কালাম ও ধর্ম নিয়ে কথা বলতেন। পীরের বেশেও চলতেন তিনি। খিজির খানের ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেন জানান, মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হবে এবং পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।


২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর বাসার দোতলায় ‘আধ্যাত্মিক পীর’ লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), অনুসারী সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর রহমান (৩২), রাসেল (৩০) ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

একই কায়দায় ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া বাড়ির দোতলায় ইসলামী ফ্রন্ট নেতা ও টেলিভিশন উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

## খিজির খানের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে
## বাড্ডায় খুন : গোডাউন ভাড়ার নামে বাড়িতে ঢোকে দুর্বৃত্তরা
## যেভাবে হত্যা করা হয় খিজির খানকে
## রহমতিয়া খানকা পরিচালনা করতেন খিজির খান
## খিজির হত্যার ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিন ইউনিট

এআর/জেইউ/এসকেডি/আরআইপি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।