৩ হাজার বছরের পুরোনো মমির কণ্ঠ দিলেন বিজ্ঞানীরা, বলল ‘ব্যাড’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

মিশরীয় একজন পুরোহিতের মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পরও যেন তার কণ্ঠ মানুষ শুনতে পায়। তিন হাজার বছর আগে মারা যাওয়া ওই পুরোহিতের কণ্ঠে কৃত্রিমভাবে ভোকাল কর্ড (গলার যে অংশ থেকে স্বর বের হয়) বসিয়ে তার কণ্ঠে স্বর তৈরি করে যেন সেই ইচ্ছায় পূরণ করলেন বিজ্ঞানীরা।

নেছায়মুন নামে ওই পুরোহিতের কণ্ঠ থেকে অনেকটা স্বরবর্ণের মতো শব্দ বের হতে শোনা গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিনি ‘বেড’ বা ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু বলেছেন।

মমি করে রাখা ওই পুরোহিত খৃষ্টপূর্ব ১০৯৯ থেকে ১০৬৯ সময়ের মধ্যে ফারাও রামেসেস ইলেভেনের রাজত্বের সময় পুরোহিত ছিলেন।থিবসের পুরোহিত হিসেবে নেছায়মুনকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য উচ্চস্বরে কথা বলতে হতো, গান গাইতে হতো। মৃত্যুর পরে তার সেই কণ্ঠ থেমে যায়। তবে তিন হাজার বছর পরে গবেষকদের একটি দল যেন সেই কণ্ঠে আবার জীবন ফিরিয়ে এনেছেন।

একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নেছায়মুনের কণ্ঠনালীর অনুসরণে থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে বাকযন্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে সঠিক মাত্রা তৈরি করার জন্য মমিটির গলার জায়গাটি স্ক্যান করা হয়। পরে কণ্ঠনালীর ভেতর কৃত্রিম বাকযন্ত্র ব্যবহার করে তারা নেছায়মুনের কণ্ঠের অনুকরণে একটি স্বরধ্বনি তৈরি করতে সক্ষম হন।

কৃত্রিম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মৃত কোনো ব্যক্তির কণ্ঠস্বর সফলভাবে পুনরায় তৈরির করার ঘটনা এটাই প্রথম কোনো চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে তারা নেছায়মুনের কণ্ঠে পুরো একটি বাক্য তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক এবং লিডস মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে এটি প্রকাশিত হয়।

স্বর পুনরায় তৈরির কৌশলটি ‘আমাদের অনেক আগে মৃত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর পুনরায় শোনার সুযোগ করে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণাটির সহ-লেখক জোয়ান ফ্লেচার। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন অধ্যাপক।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক জন স্কোফিল্ড ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, নেছায়মুনের ‘বিশেষ আকাঙ্ক্ষা’ ছিল মৃত্যুর পরে যেন তার কণ্ঠ শোনা যায়, যা তার ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। এটা তার কফিনে লেখা রয়েছে, যা তিনি চাইতেন। আমরা সেই ইচ্ছাটিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছি।

যেভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন বিজ্ঞানীরা

মানব শরীরে কণ্ঠনালী হচ্ছে এমন একটি পথ, যেখানে শব্দ পরিস্রাবিত (ফিল্টার) হয়। সেই শব্দ তৈরি হয় বাকযন্ত্রের মাধ্যমে, যে অঙ্গটি স্বরযন্ত্র বা বাগযন্ত্র নামে পরিচিত। কিন্তু আমরা তখনি শব্দটি শুনতে পাই, যখন সেটা কণ্ঠনালী থেকে বেরিয়ে আসে।

নেছায়মুনের কণ্ঠনালী থেকে বের হওয়া শব্দের অনুরূপ শব্দ বের করার জন্য থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে সঠিক মাত্রা অনুযায়ী সেটার একটা অনুলিপি তৈরি করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি কেবল তখনই করা সম্ভব যদি কোনো ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের নরম টিস্যু যথাযথভাবে অক্ষত থাকে। এক্ষেত্রে নেছায়মুনের কণ্ঠস্বর অক্ষত পাওয়া গেছে।

নেছায়মুনের ক্ষেত্রে তার মমি করা শরীরটি ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। আর বিষয়টি গবেষক দলটি কাজ শুরু করার আগে সিটি স্ক্যান করে নিশ্চিত হন। এরপরে একটি কৃত্রিম বাকযন্ত্রের শব্দ ব্যবহার করে তার কণ্ঠ বের করা হয়, যা আধুনিক বাকশক্তি সংশ্লেষ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গবেষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে মমির কণ্ঠ থেকে শব্দ বের করা এবং সেসব শব্দ মিলিয়ে বাক্য তৈরি করা। এ বিষয়ে অধ্যাপক স্কোফিল্ড বলেছেন, আমরা আশা করছি, তিনি (নেছায়মুন) কার্নাক মন্দিরে কী বলতেন, তার একটা সংস্করণ আমরা তৈরি করতে পারব।

নেছায়মুন কে ছিলেন

থিবসের (আধুনিক লুক্সর) আমুন কার্নাক মন্দিরের একজন পুরোহিত ছিলেন নেছায়মুন। তিনি ছিলেন একজন ওয়াব পুরোহিত, যার মানে হলো তিনি শুদ্ধতার একটি নির্দিষ্ট স্তুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং মন্দিরের সবচেয়ে পবিত্র অভ্যন্তরীণ অংশে দেবতা আমুনের মূর্তির কাছে তাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

গবেষণায় জানা গেছে, নেছায়মুনের মাড়ির রোগ ছিল এবং তার দাঁতের মারাত্মক অবনতি হয়েছিল। তিনি ৫০ বছর বয়সে মারা গেছেন বলে মনে করা হয়, সম্ভবত গুরুতর এলার্জির প্রতিক্রিয়ায়।

রামেস ইলেভেনের সময়কার একমাত্র এই মমিটি থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। তার মমির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে প্রাচীন মিশরের অনেক তথ্য বোঝা সম্ভব হয়েছে। ইংল্যান্ডের লিডস সিটি মিউজিয়ামে নেছায়মুনের মমি সংরক্ষিত রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।