বেনাপোল সীমান্তে দেখার কেউ নেই!
বৈধ পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভ্রমণকর দিয়ে ভারত থেকে নিজ দেশে ফেরার সময় পদে পদে পাসপোর্ট যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তে কাস্টমস বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের সমন্বয়ের অভাবে পাসপোর্ট যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ভারত থেকে দেশে ফেরা পাসপোর্টযাত্রীরা ভারতের কাস্টমস বিএসএফ এবং বাংলাদেশের কাস্টমস বিজিবির কাছে তাদের লাগেজ খুলে একাধিকবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ব্যাগ না খুললেও নানা প্রশ্ন করে জর্জরিত করে তুলছে।
চেকপোস্ট সূত্রে জানা যায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মনে করে মাল্টিপোল ভিসায় এদেশের অনেক নারী-পুরুষ ভারতে গিয়ে বিভিন্ন মালামাল এনে ব্যবসা করে থাকেন। চেকপোস্টে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ছেড়ে দেয়। সে কারণে বিজিবি ভারত ফেরত যাত্রীদের কাস্টমস গেট পার হলে ব্যাগ তল্লাশি করে থাকে। ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী মাল আনলেও মাল্টিপাল ভিসায় একাধিকবার ভারত যাওয়ার কারণে মালামাল রেখে দিচ্ছে। তাই পাসপোর্ট যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
নোয়াখালির মোস্তানসের বিল্লাহ, ঢাকার সাকিল আহমেদ, ঢাকা বংশালের নাছিমা খাতুন অভিযোগ করেন, ভারত থেকে ফিরলে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস তল্লাশি করার নিয়ম। কাস্টমস তল্লাশি করে তাদের মাল ছেড়ে দিলেও বিজিবি সদস্যরা তাদের মাল আটক করছে। তাদের অভিযোগ সরকারকে ৫শ টাকা ভ্রমণ কর দিয়ে ভারত গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী পণ্য আনলেও বিজিবি তা রেখে দিচ্ছেন। এ কারণে তাদের পাসপোর্টে না গিয়ে চোরাইপথে ভারতে যাওয়া ভালো।
বেনাপোল চেকপোস্টের একটি সূত্র জানায়, চেকপোস্ট কাস্টমস পার হয়ে বিজিবির হয়রানির শিকার হয়ে আবারও বেনাপোল থেকে চার কিলোমিটার দূরে যশোর-বেনাপোল সড়কের আমড়াখালি নামক স্থানে বিজিবির চেকপোস্টে ব্যাগ খুলে দেখাতে হয়। এখানে ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটার পর একটা তল্লাশি করে ছাড় দেয়া হয়। রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও পাসপোর্টযাত্রীরা রেহাই পান না তাদের হাত থেকে।
অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে পরিবহন থেকে নীচে নামিয়ে এনে ব্যাগপত্র খুলে দেখাতে হয়। তারা দূর থেকে এসে একাধিকবার ব্যাগ খুলতে খুলতে নাজেহাল হচ্ছেন। সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, সরকারি গেজেট অনুযায়ী একজন যাত্রী ৩শ ডলারের পণ্য বহন করতে পারে। আর সে অনুযায়ী কাস্টমস তাদরে ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী পণ্য ছেড়ে থাকে। কিন্তু অন্য কোনো সংস্থার লোক যাত্রীদের মাল আটক করলে তাদের কিছু করার নেই। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তারা এ কাজ করে থাকেন।
বেনাপোল চেকপোস্টের চায়ের দোকানদার তরিকুল ইসলাম (পাসপোর্ট নং-এডি- ২৬৫৯৮৬৫) জানান, তিনি ভারত থেকে ফেরার সময় কিছু চকলেট ভাজা বিস্কুট এবং স্যান্ডেল নিয়ে আসে। যার মূল্য ছিল মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা।
চেকপোস্ট দোকানদার গোপালচন্দ্র জানান, তিনি ভারত থেকে আসার সময় ১২ হাজার টাকার মতো একই ধরনের খাবার পণ্য নিয়ে আসেন। যা কাস্টমস দেখে ছেড়ে দিলেও গেট পার হয়ে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে তাদের মালামাল রেখে দেয়।
এদিকে ভারত থেকে আসা পণ্য সামগ্রী বিজিবি কর্তৃক আটক করে কাস্টমসে একটা আনুমানিক মূল্য ধরে জমা দিলে বিজিবি ও কাস্টমসের মূল্যের সঙ্গে অনেক ব্যবধান দেখা যায়। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের কাছ থেকে যে সব পণ্য বিজিবি কর্তৃক আটক করা হয় সেসব পণ্য বিজিবি একটি মূল্য ধরে কাস্টমসে জমা করে। পরে ওই পণ্য নির্ধারিত পাসপোর্টযাত্রী কাস্টমসে ছাড়াতে গেলে বিজিবির নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে বাজার অনুযায়ী কোনো মিল থাকে না। বিজিবি তাদের আটক পণ্যের মনগড়া দাম নির্ধারণ করে থাকে।
সম্প্রতি ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী গোপাল চন্দ্র (পাসপোর্ট নং-এজি-৫১০৩২০৫) ও তরিকুল (পাসপোর্ট নং এডি-২৬৫৯৬৫) জানান, তাদের আটক পণ্য বিজিবি যথাক্রমে ৩০ হাজার ৫শ টাকা ও ৩৯ হাজার ৪শ টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু সেই মাল কাস্টমস বাজার অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন যথাক্রমে ১ হাজার ৯১৯ টাকা ও ২ হাজার ১৫৫ টাকা। যা বিজিবির এবং কাস্টমসের মূল্যের ভেতর অনেক ব্যবধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর ২৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শে আমরা তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে থাকি। এ চেকপোস্ট থেকে সোনা, অস্ত্র, ফেনসিডিলসহ অনেক যাত্রীর কাছ থেকে আমরা অবৈধ পণ্য আটক করেছি। সেটা কাস্টমে জমা দেয়া হয়। সেখান থেকে পাসপোর্টযাত্রীরা সরকারি শুল্ক দিয়ে পণ্য ছাড় করে নিয়ে যান। এর ফলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব পাচ্ছেন।
এখানে কোন যাত্রীকে হয়রানি করা হয় না। হয়রানির অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মো. জামাল হোসেন/এমজেড/আরআইপি