করোনাভাইরাস, বেইজিংয়ে বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২০
চীনে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চার শতাধিক আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর।
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোমবার বেইজিংয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
নতুন এই ভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় শুধু চীন নয় পুরো বিশ্বেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তারপর থেকেই চীনের বিভিন্ন শহরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। একটি সামুদ্রিক বাজার থেকেই ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উহান থেকে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে গণপরিবহন, বিমান চলাচল ও রেলসেবা বাতিল করা হয়েছে। চীনের অন্যান্য শহরে ভ্রমণেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, হুবেই প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ৫৬ থেকে ৭৬ তে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য শহরে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
চীনের প্রায় ১৭টি শহর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বেইজিং, সাংহাইসহ অনেক শহরেই দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
কমপক্ষে দুই হাজার শয্যাবিশিষ্ট দুটি নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। মাস্ক এবং সুরক্ষিত পোশাক উৎপাদনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। জানুয়ারির শুরু থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় তখন থেকেই এই ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। উহান ছাড়াও চীনের রাজধানী বেইজিং এবং শাংহাইতে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে হংকংয়ে এখন পর্যন্ত ছয়জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনে প্রাদুর্ভাব ঘটলেও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরেঞ্জ কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেখানে তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে কানাডায় একজন এবং অস্ট্রেলিয়ায় চারজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
টিটিএন/এমকেএইচ