করোনাভাইরাস : তিন মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২০
চীনে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত তিন হাজার মানুষ। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা আক্রান্তদের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সক্ষম হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে আক্রান্তদের শরীরে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্ভব হলে তা হবে বিরল ঘটনা। কেননা এর আগে কোনো মহামারিতে এত দ্রুততম সময়ে প্রতিষেধক আবিষ্কার করে তা প্রয়োগের রেকর্ড নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে জেনেটিক কোড আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) বিশ্লেষণ করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জেনেটিক কোড হাতে এলেই করোনাভাইরাসের কোনো নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্ষম হবেন তারা।
এর আগে ২০০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) মহামারি আকার ধারণ করলে এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে ২০ মাস সময় নেন যুক্তরাষ্টের বিজ্ঞানীরা।
এদিকে চীনের বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা নতুন করোনাভাইরাসের জেনেটিক ক্রমবিন্যাস শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সহজ হবে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তারপর থেকেই চীনের বিভিন্ন শহরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। একটি সামুদ্রিক বাজার থেকেই ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে চীন বাদেও থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
উহান থেকে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে গণপরিবহন, বিমান চলাচল ও রেল সেবা বাতিল করা হয়েছে। চীনের অন্যান্য শহরে ভ্রমণেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, হুবেই প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ৫৬ থেকে ৭৬ তে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য শহরে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে ৮০ জন। এছাড়া আরও তিন হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
কমপক্ষে দুই হাজার শয্যাবিশিষ্ট দুটি নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। মাস্ক এবং সুরক্ষিত পোশাক উৎপাদনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। জানুয়ারির শুরু থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় তখন থেকেই এই ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরেঞ্জ কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেখানে তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে কানাডায় একজন এবং অস্ট্রেলিয়ায় চারজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এসআর/পিআর