করোনাভাইরাসে আশার আলো চীনে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২০
করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন। এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসকরা। চীন বলছে, এই ভাইরাসের নতুন চিকিৎসায় তারা সফল হয়েছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন শিনহুয়া নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি হাসপাতালের সাতজন মেডিকেল স্টাফকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে তাদের মধ্যে এই ভাইরাসের যেসব লক্ষণ দেখা দিয়েছিল তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, শিনহুয়া নিউজ এজেন্সি টোংজির ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ অব হুয়াংজং ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, ওই হাসপাতালগুলোর সাত মেডিকেল স্টাফ নতুন চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ আছেন।
তাদের মধ্যে এই ভাইরাসের যেসব লক্ষণগুলো দেখা গিয়েছিল সেগুলো নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভ্যাকসিনের সফলতা যাচাই করতে পারেনি। তবুও দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই ঘটনাকে সফলতা হিসেবেই দেখছে চীন।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তারপর থেকেই চীনের বিভিন্ন শহরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। একটি সামুদ্রিক বাজার থেকেই ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উহান থেকে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে গণপরিবহন, বিমান চলাচল ও রেল সেবা বাতিল করা হয়েছে। চীনের অন্যান্য শহরে ভ্রমণেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, হুবেই প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ৫৬ থেকে ৭৬ তে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য শহরে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে ৮০ জন। এছাড়া আরও তিন হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
কমপক্ষে দুই হাজার শয্যাবিশিষ্ট দুটি নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। মাস্ক এবং সুরক্ষিত পোশাক উৎপাদনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। জানুয়ারির শুরু থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় তখন থেকেই এই ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। উহান ছাড়াও চীনের রাজধানী বেইজিং এবং শাংহাইতে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে হংকংয়ে এখন পর্যন্ত ছয়জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনে প্রাদুর্ভাব ঘটলেও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরেঞ্জ কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেখানে তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে কানাডায় একজন এবং অস্ট্রেলিয়ায় চারজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টিটিএন/পিআর