করোনাভাইরাসে মৃত ৫৬, মহামারির শঙ্কা চীনে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

চীনে প্রাণঘাতী নতুন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। রোববার পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে; আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার।

তবে স্থানীয় এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন, সরকার মিথ্যা বলছে এবং চীনে প্রায় এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই পরিস্থিতিকে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বলতে নারাজ। এ সপ্তাহে তারা বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে। চীন করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা

jagonews24

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথমবারের মতো নতুন করোনাভাইরাসটি ধরা পড়ে। সেখান থেকে এটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও, ভারত, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।

এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফ্রান্সে অন্তত তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করছে ইসরায়েল।

রোববার পর্যন্ত অন্তত ১৯৭৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চীন। এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় ১৮টি শহরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। এমন সময় এই ভাইরাসটি দেখা দিল যখন চীনারা তাদের নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের ছুটিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরতে যায়।

এ অবস্থায় করোনাভাইরাস আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণে নববর্ষের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় চীনা কর্তৃপক্ষ উহান থেকে চলাচলকারী সব যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। রোববার থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে।

jagonews24

করোনাভাইরাস বিস্তারের আশঙ্কায় এই শহরের বাসিন্দাদের অন্য কোথাও যাওয়া বা শহরে কাউকে আসতে দেয়াও হচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে উহানে। সেখানে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন। করোনাভাইরাসের উৎস উহানে ইতোমধ্যে সামরিক বাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হয়েছে।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনা নাগরিকদের কারও সঙ্গে করমর্দন না করে ঐতিহ্য অনুসারে হাতজোড় করে সম্মান প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, উহানে আটকে পড়া মার্কিন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, করোনাভাইরাস ধরা পড়া দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে কানাডাও। শনিবার দেশটিতে এই ভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি কিছুদিন আগেই উহান থেকে ফিরেছেন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে গরু-ছাগল জাতীয় পশুর ডায়রিয়া, পাখিদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ জ্বর, শুষ্ক কাশি ও শ্বাসকষ্ট। সেখান থেকে নিউমোনিয়াও হতে পারে। প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো ততটা গুরুতর মনে না হলেও শেষপর্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে।

থামানোর উপায় কী?

নতুন ভাইরাসটির এখনও কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। এ কারণে এর ছড়িয়ে পড়া থামানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে, আক্রান্তদের আবদ্ধ জায়গায় রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরীক্ষা করা। যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন তাদের পর্যবেক্ষণ করা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কাজে আসতে পারে। এছাড়া গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা যেতে পারে।

বিশ্ব কী করছে?

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এখন চীন-ফেরত ব্যক্তিদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর ঢুকতে দিচ্ছে। প্রতিটি বিমানবন্দরে থার্মাল ডিটেক্টর বসিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। যদিও এভাবে পরীক্ষা করা কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

jagonews24

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে অন্তত পাঁচদিন লাগে, তাহলে ততদিনে একজন রোগী খুব সহজেই অর্ধেক বিশ্ব ঘুরে আসতে পারে। তখন কোনো স্ক্যানারেই তার এই অসুখ ধরা পড়বে না। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে ফ্রান্সেই।

দেশটি বলছে, গত সপ্তাহে তিন চীনা নাগরিক যখন বিমানবন্দর পার হয়ে দেশটিতে ঢোকেন, তখন তাদের শরীরে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণই ছিল না। কিন্তু কিছুদিন পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি স্পষ্টতই বিশ্বস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। চীনের এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।’

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং)। শনিবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে তিনি এই সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, চীন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি।

সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

কেএএ/এসআইএস/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।