করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে চীন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২০
![করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে চীন?](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/coronavirus5-20200126104925.jpg)
করোনাভাইরাসে উদ্বেগ বাড়ছে চীনে। যতই সময় যাচ্ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের দম ফেলারও সময় নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রাণঘাতী নতুন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের নববর্ষের অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে করা এক বিশেষ বৈঠকে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশ মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
উহান শহরে প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর চীনের অন্যান্য শহরেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সরকার যতটা বলছে তার চেয়েও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক চিকিৎসা কর্মী দাবি করেছেন।
উহান শহরের হাসপাতালে কর্মরত এক নার্সের দাবি, সেখানে ইতোমধ্যেই এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মাস্ক পরে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন ওই নার্স। তিনি বলছেন, সরকারিভাবে যে সংখ্যা বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। একাধিক শহরে ঢোকা এবং শহর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলেও ইতোমধ্যেই অনেক শহরেই এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিপল'স ডেইলি জানিয়েছে, জরুরি সেবাদানের লক্ষ্যে ১৩শ শয্যাবিশিষ্ট দ্বিতীয় একটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে এ সপ্তাহের মধ্যেই। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের ভেতরে হয়তো এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আটকানো সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তারা বলছেন, এই ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করছে। এটাই এই ভাইরাসের এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারার ‘একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’
বিজ্ঞানীদের অনুমান, একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে আড়াইজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে। তবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে চীনা কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার প্রশংসা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তারা এরকম আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছড়িয়ে পড়ার হার ৬০ শতাংশ কমাতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করা সহজ নয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন রোগীদেরও আলাদা করতে হবে যাদের মধ্যে সাধারণ সর্দি-জ্বরের সামান্য লক্ষণও দেখা গেছে। অন্যদিকে, ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী, এ বছর ১১ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তাদের অনুমান সত্যি হলে এই সংখ্যা সার্স-এ আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি। তবে এই ভাইরাস এর আগে কখনো দেখা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯-এনসিওভি অথবা নভেল করোনাভাইরাস।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গরু-ছাগল জাতীয় পশুর ডায়রিয়া, পাখিদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ জ্বর, শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্ট। প্রাথমিকভাবে এটি ততটা গুরুতর মনে না হলেও শেষপর্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ এখনও এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
চীনের উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটার পর ভাইরাসটি বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও, ভারত, নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফ্রান্সে অন্তত তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরদিকে, এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করছে ইসরায়েল।
টিটিএন/এমএস