সোলেইমানি হত্যায় ‘বিশেষ সহায়ক’ ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা!
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) অভিজাত কুদস্ ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ‘বিশেষ সহায়ক’ শক্তি ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। মার্কিন বাহিনী একপাক্ষিক হামলা চালিয়ে সোলেইমানিকে হত্যার যে সুযোগ পেয়েছে, তাতে বিশেষভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে তেহরানের আঞ্চলিক বড় প্রতিপক্ষ তেলআবিব।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এনবিসি বলছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সোলেইমানি সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছিল, তা নিশ্চিত করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। আর নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে ওয়াশিংটনের কোনো মিত্রের যদি কথা হয়ে থাকে, তবে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
সীমানার বাইরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে সামরিক প্রভাব ও পরিসর বেড়েছে, তার প্রধান কারিগর ছিলেন জেনারেল সোলেইমানি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ এতদঞ্চলে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বড় মাথাব্যথার কারণ ছিলেন তিনি।
গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই তার গাড়িবহরে ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী সোলেইমানিকে হত্যা করে। একপাক্ষিক এ হামলায় প্রাণ হারান ইরাকে ইরানের সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হাশদ আল-শাবির নেতা আবু মাহদি আল মুহান্দিসও।
তেহরান থেকে দামেস্ক গিয়ে, সেখান থেকে বৈরুত এবং বৈরুত থেকে দামেস্ক হয়ে বাগদাদে আসছিলেন সোলেইমানি।
ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর এক নেতা জানান, বৃহস্পতিবার সোলেইমানি যখন তেহরান থেকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পৌঁছান, তখন থেকেই তার ওপর নজরদারি করা শুরু হয়। ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এনবিসি জানায়, দামেস্ক থেকে লেবাননের বৈরুত হয়ে সোলেইমানি যখন ফের সিরিয়ার রাজধানীতে ফেরেন, তখন সেখান থেকেই তার বাগদাদ সফরের বিষয়টি সিআইএকে জানায় ইনফরমাররা (গোপন তথ্যদাতা)। এই তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে সিআইএকে নিশ্চিত করে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার নাম বলা না হলেও জানা যায়, ওই তথ্যের ভিত্তিতেই সিআইএ নিশ্চিত হয়- সিরিয়ার বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ছাম উইংসের ফ্লাইটে সোলেইমানি বাগদাদে যাচ্ছেন।
যদিও ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় রাত ৮টা ২০মিনিটে। কিন্তু অজানা কারণে সেটি প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে রাত ১০টা ২৮ মিনিটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে। রাত ১২টা ৩২ মিনিটে ফ্লাইটটি বাগদাদে অবতরণের পর সোলেইমানি বিমানবন্দরে কালক্ষেপণ না করে রওয়ানা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সিআইএ’র তথ্য অনুসরণ করে বাগদাদ বিমানবন্দরের সবচেয়ে কাছে (৫৭০ কিলোমিটার) কুয়েতের আলী আল সালেম ড্রোন ঘাঁটি থেকে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায় সোলেইমানির বহরে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াশিংটনের কোনো মিত্র যদি আগে থেকে জেনে থাকে, তবে সেটা ইসরায়েল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে এ বিষয়ে আলাপ করে থাকতে পারেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে।
সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। এমনকি এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে একদিন পরেই ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে এবং পরে মার্কিন দূতাবাসের অদূরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানের সামরিক বাহিনী। এতে ৮০ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে তেহরান দাবি করলেও ওয়াশিংটন তা উড়িয়ে দেয়।
এইচএ/এমএস