তাভেলা-কোনিও হত্যার যোগসূত্র খুঁজছে গোয়েন্দারা


প্রকাশিত: ০৬:৫৭ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার ও রংপুরে জাপানের নাগরিক হোসি কুনিও হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র খুঁজছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, দু’টো ঘটনার ধরন প্রায় একই। পিস্তলের ব্যবহার ও তিনজন করে মোটরসাইকেলে এসে ৩টি গুলির ব্যবহারও একই।

মোটরসাইকেল ও তিনজন করে খুনির উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত। খুনের ধরন একই মনে হওয়ায় এ দুই হত্যাকাণ্ডে যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা সদসদ্যরা।

তাভেলার খুনের বিষয়ে যখন কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না পুলিশ ঠিক তখনই আরেকজন বিদেশি নাগরিক হোসি কুনিও একই পদ্ধতিতে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হলেন।

তাভেলা সিজারে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় আরেকজন বিদেশিকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ। এ দুই হত্যাকাণ্ডের সংবাদ গুরুত্ব দিয়েই পরিবেশন করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে যে কায়দায় দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে, রংপুরের কাউনিয়ার আলুটারী মহিষওয়ালা মোড়ে জাপানের নাগরিক হোসি কুনিও’কেও একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে।

লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে তাভেলাকে হত্যা করা হলেও রংপুরের কাউনিয়ায় দিন দুপুরে বেলা ১১টার দিকে কোনিও কে হত্যা করা হয়। তবে এক্ষেত্রেও কৌশলী হয়ে মুখোশ ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা।

রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তিন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে কোনিওকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা কোনিওকে তিনটি গুলি করে। গুলি তার বুকে, ডান হাতে এবং আরেকটি ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। এ সময় খুনিরা মুখোশ পরা ছিল।

মুন্নাফ হোসেন নামে স্থানীয় এক রিকশাচালক জানান, প্রায় দিনেই জাপানী নাগরিক হোসি কোনিও তার প্রকল্পে যেতেন। একইভাবে শনিবার নগরীর মাহীগঞ্জ থেকে আলুটারীতে কোনিওকে নামিয়ে দেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে মুখোশ পরা দুই যুবক তার রিকশার সামনে দাঁড়ায়। পাকা রাস্তার মাথায় হেলমেট পড়া আরেক যুবক একটি মোটর সাইকেল নিয়ে বসে ছিল। পরে তারা তিনজন গুলি করে ওই মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, কোনিওর বাড়িওয়ালা জাকারিয়া বালা, রিকশাচালক মুন্নাফ হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মুরাদ হোসেন, প্রায়ই কোনিওর সঙ্গে চলাফেরা করা হিরা, রংপুর মহনগরের বিএনপির’র সদস্য রাশেদুন নবী খান বিপ্লব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান নাকু।

র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, ইতালির নাগরিক তাভেলা এবং কোনিও হত্যাকাণ্ড একই সুতোয় গাঁথা কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।দুই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দু’টি ঘটনার যাবতীয় তথ্য র‌্যাব সংগ্রহে রাখছে।

অন্যদিকে ডিএমপির উপ-কমিশনার(ডিসি মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজারে হত্যার নতুন কোন তথ্য নেই। আটক কিংবা মোটিভ জানা গেছে, অবশ্যই তা গণমাধ্যমে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বিদেশি নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালির নাগরিককে হত্যার পর বিদেশিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্ক করা হয়।

পুলিশ সদর দফতরে জরুরি বৈঠকে অংশ নেয়া এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, ওই বৈঠক থেকে দেশে অবস্থান করা সব বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জেইউ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।