এসব পুরস্কার জাতির জন্য সম্মান : প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে ঢাকায় পৌঁছে সর্বস্তরের জনতার গণসংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার তাকে অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
পরে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গণভবনের প্রধান প্রবেশমুখের সিঁড়িতে বিশিষ্ট লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের কাছ থেকে ফুলের তোড়া গ্রহণ করার পর বলেন, ‘এসব পুরস্কার জাতির জন্য একটি সম্মান এবং জনগণকেই এর কৃতিত্ব দেয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসভবন গণভবনে পৌঁছানোর পরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, ক্রিকেটারসহ গুণীজনেরা। জাতিসংঘে গিয়ে দু’টি সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মূলভবনের ফটকে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তাসকিন আহমেদ, এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম ও নিশাত মজুমদার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী ফটকে পা রাখতেই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বন্যা সুর তোলেন- ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। এসময় উপস্থিত অন্যরা তার সঙ্গে খালি গলায় গেয়ে ওঠেন, ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে/বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।’
এ অভ্যর্থনা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ অর্জন জনগণের, জনগণের প্রাপ্য এ পুরস্কার। দু’টি পুরস্কারই পুরো জাতির ও দেশের জন্য সম্মানের।’
এর পরে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
এর আগে, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট শনিবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মতিন খসরু, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার পথে প্রধানমন্ত্রী সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করেন।
সিলেট জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান।
তাদের মধ্যে ছিলেন ইমরান আহমেদ এমপি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমেদ এবং সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশফাক আহমেদ।
এর আগে, নিউইয়র্ক থেকে দেশে আসার পথে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একদিনের যাত্রা বিরতি করেন।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে তার দেশের বিবৃতি পাঠ করেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনারের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ এ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন।
শেখ হাসিনা গত ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাওয়ের কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ গ্রহণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৮ সেপ্টেম্বর অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেদিন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, এবং নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমাসহ বেশ কিছু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে পৌঁছেন।
একে/আরআইপি