রূপগঞ্জে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও


প্রকাশিত: ০৪:১৯ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ভুয়া এনজিও। বিশেষ করে উপজেলার ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকায় প্রতারণার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয় গ্রহণ ও অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে এ সকল এনজিও উধাও হয়ে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, পুশি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা রূপগঞ্জ শাখা নামে একটি এনজিও ভুলতা এলাকায় গড়ে তুলেন নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এরপর ধীরে ধীরে এর সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩শ’তে। প্রতিটি সদস্যের কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া অধিক লাভ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা জমা রাখেন। মাঝে মধ্যে জমাকৃত টাকার লাভের অংশ সদস্যদের দেয়া হতো। গত এক বছর আগে এ এনজিওটি হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়।

এরপর সদস্যরা তাদের উপার্জিত জমা রাখা অর্থ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়েও এনজিওটির কোনো সন্ধান পাননি। একই অভিযোগ মীর মার্কেটে অবস্থিত আদ-দ্বীন মাল্টি-পারপাস নামে এনজিওর বিরুদ্ধে। এনজিওর ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।

অপরদিকে, বরপা এলাকার প্রভাতি মাল্টিপারপাস নামে অপর একটি এনজিও শত শত সদস্যের অর্থ প্রতরাণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছে। সদস্যরা এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে তাদের পাওনা চাইতে গেলে দেই-দিচ্ছি করে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতারিত সদস্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুলতা এলাকার আবেদ আল হাসান শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের আরডিপি মাল্টিপারপাস, আব্দুল হক সুপার মার্কেটের ফারইস্ট কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট হোম সোসাইটি, নুর ম্যানশন মার্কেটের রিজম ফাইসন্স (ইনভেস্ট) লিমিটেড, ঢাকা কো-অপারেটিভ, ড্রিমল্যান্ড শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, আল-জাজিরা মাল্টিপারপাস, শিংলাব এলাকার ডিকে ফাউন্ডেশন মানবিক সংস্থা, দেশ উন্নয়ন মাল্টিপারপাস, গাউছিয়া মার্কেটের এস বাংলা, ম্যাক্সিম মাল্টিপারপাসসহ অসংখ্য ভুয়া এনজিও প্রতারণার মাধ্যমে সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন এসব এনজিও খুঁজে পাচ্ছে না সদস্যরা।

জানা গেছে, এ সকল এনজিও কর্মকর্তারা প্রথমে এলাকায় এসে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কার্যালয় খুলে বসেন। এরপর স্থানীয় লোকজনকে এনজিওর কর্মকর্তারা অধিক বেতন দেখিয়ে বিভিন্ন পদে চাকরি দেন। এতে অনেকেই অধিক বেতনের আশায় চাকরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশন হিসেবে চাকরি দেয়া হয়ে থাকে। উত্তোলনকৃত অর্থ থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন পেত তারা। এরপর তাদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে দরিদ্র ও সহজ-সরল মানুষগুলোকে এস কল এনজিওতে সদস্য হিসেবে যুক্ত করেন। পরে সঞ্চয় থেকে শুরু করে অর্থ আদায় করা।

ভুলতা এলাকার পত্রিকা বিক্রেতা ইসমত আলী মাস্টার জাগো নিউজকে বলেন, ভাই কি আর বলব, সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জন করে সংসার চালিয়ে আদ-দ্বীন মাল্টিপারপাসে ৫ হাজার টাকার মতো সঞ্চয় জমা করেছিলাম। এখন তার জমাকৃত সঞ্চয়ের অর্থ নিয়ে মাল্টিপারপাসটি উধাও হয়ে গেছে।

সাওঘাট এলাকার জুতা ব্যবসায়ী সুকেন চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ফুটপাথে জুতার ব্যবসা করি। সারাদিন জুতা বিক্রি করে ৪ থেকে ৫শ টাকা লাভ হতো। সেই লাভের টাকা থেকে প্রতিদিন ১শ টাকা পুশি মানবিক উন্নয়ন সংস্থাতে প্রায় ৪ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। আমার মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনজিওতে সঞ্চয় করেন। সকল সদস্যের টাকা নিয়ে বর্তমানে এনজিওটি উধাও হয়ে গেছে।

পাঁচাইখা এলাকার ইমান হোসেন বলেন, আমাদের মতো দরিদ্র ঘরের মানুষকে সহজ-সরল পেয়ে এনজিওগুলো দিনের পর দিন প্রতারণা করে যাচ্ছে। গরিরা আরো গরিব হচ্ছে।

গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, প্রতারণার কারণে বর্তমানে ভুয়া এনজিও থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ভুয়া এনজিওর বিষয়ে প্রশাসনের মনিটরিং করা প্রয়োজন। তাহলে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেত দরিদ্র ও সহজ-সরল মানুষ ।

ভুলতা ইউনয়িন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের জনগণ যাতে কোনো এনজিওতে প্রতারিত হতে না হয় সেদিকে আমার খেয়াল রয়েছে। তারপরও ভুয়া এনজিও থেকে দূরে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি এনজিওর কিন্তু সরকারি রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। আবার কোনো কোনো এনজিও গোপনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন এনজিও যদি প্রতারণা করে বা সদস্যরা যদি প্রতারণার অভিযোগ করেন তাহলে কিন্তু আমরা তদন্ত করে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ পেলে সে সব এনজিওর রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ ব্যবস্থা নিতে পারি।

তিনি আরো বলেন, আসলে মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিধি বা প্রশাসনকে অবগত না করে এনজিওতে যুক্ত হওয়ার কারণে প্রতারিত হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। তারপরও এসকল বিষয়ে সদস্য বা ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
                                                        
মীর আব্দুল আলীম/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।