মাসজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ভারতের পর্যটন শিল্পে ধস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আর অস্থিরতায় ভারতের পর্যটন শিল্পে মারাত্মক ধস নেমেছে। চলতি মাসের এই বিক্ষোভে অন্তত ১০টি রাজ্যের বেশ কিছু শহর অশান্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে ২৬ জন প্রাণ হারান। এছাড়া ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে অন্তত সাতটি দেশ।

ভারতের বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইন সংসদে উত্থাপন হওয়ার সময় থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়, সে বিক্ষোভ এখনো চলছে। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্ষোভের কারণে দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ২ লাখ পর্যটক বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থাপত্য তাজমহল ভ্রমণ বাতিল কিংবা স্থগিত করেছেন।

তাজমহল ট্যুরিস্ট পুলিশ স্টেশনের পরিদর্শক দীনেশ কুমার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এবার তাজমহলে পর্যটক কমেছে ৬০ শতাংশ। দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আমাদের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জানতে চাচ্ছেন। আমরা তাদের সুরক্ষার আশ্বাস দিলেও না আসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।’

সপ্তদশ শতাব্দীতে মারবেল পাথরে নির্মিত বিশ্বের আশ্চর্য স্থাপনা তাজমহল ভারতের উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত। ডিসেম্বর মাসজুড়ে ভারতে বিক্ষোভেও সবচেয়ে বেশি উত্তাল ছিল দেশটির সর্ববৃহৎ এই রাজ্য। এছাড়া বিক্ষোভে নিহত মোট ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনই উত্তরপ্রদেশের। এদিকে এখনো সেখানে বিক্ষোভ চলছেই।

প্রতিবছর উত্তরপ্রদেশের আগ্রা শহরে অবস্থিত তাজমহল পরিদর্শন করে ৬৫ লাখ পর্যটক। তাতে প্রবেশ ফি হিসেবে ভারত সরকার আয় করে কম করে হলেও ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাজমহলে একজন বিদেশি পর্যটকের প্রবেশ ফি ১১০০ রুপি। তবে দেশি ও প্রতিবেশী দেশের পর্যটকদের জন্য তাতে কিছুটা ছাড় রয়েছে।

তাজমহলের আশপাশের বিলাশবহুল হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর ম্যানেজাররা বলছেন, এমনিতেই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪.৫ শতাংশে নেমেছে, তার ওপর উৎসবের এই মৌসুমে শেষ মুহূর্তে এসে অনেকে তাদের বুকিং বাতিল করছেন। এতে করে আমাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভ দমনে সরকার আগ্রার ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে। আড়াই শতাধিক ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও গাইড নিয়ে গঠিত আগ্রা পর্যটন উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সন্দ্বীপ আরোরা বলছেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার কারণে আগ্রার ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এদিকে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইসরায়েল, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও তাইওয়ান ভারতে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। ভারতে ভ্রমণের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জানতে স্থানীয় দূতাবাসে খোঁজ নেয়ার নির্দেশও দিয়েছে দেশগুলো।

আসাম পর্যটন উন্নয়ন করপোরশের প্রধান জয়ন্ত মাল্লা বড়ুয়া বলেন, প্রতি ডিসেম্বরে আসামে দেশি-বিদেশি মিলে পর্যটক আসে গড়ে ৫ লাখ। কিন্তু বেশ কিছু দেশ আসাম ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে রেখেছে। তাতে করে এই বছরের ডিসেম্বরে পর্যটক কমেছে ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি।

এসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।