নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এবার দক্ষিণ ভারতে বিক্ষোভ
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ এবার দক্ষিণ ভারতেও। সোমবার তামিলনাডু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই শহরের পথে বিশাল মিছিল করেছে বিরোধীরা। রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে-র ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে কংগ্রেস ও সিপিএমসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। তবে উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের অন্যান্য প্রান্তে বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। পাল্টা এর সমর্থনেও মিছিল হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে সোমবার প্রতিবাদ মিছিল করবে এমন ঘোষণা আগেই দিয়েছিল তামিলনাডুর ক্ষমতাসীন দল নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্রা কাঝঘাম বা ডিএমকে। সোমবার মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় ঢল নামে সাধারণ জনতার। ডিএমকের প্রধান এম কে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা পি চিদাম্বরম।
এছাড়া সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণন, ভিসিকে প্রধান থোল তুরিমাভালভনের মতো নেতারাও মিছিলে অংশ নেন। সকালে শহরের এগমোরে জমায়েত হয়ে সব দলের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে রাজারথিনাম স্টেডিয়াম অভিমুখে যাত্রা করে। মিছিলে অংশ নেয়া নেতারা সেখানে এক জনসভায় বক্তব্য দেবেন।
তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার অজুহাতে চেন্নাই শহর পুলিশ মিছিলের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে। অবশেষে রোববার মিছিলের অনুমতি দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট। তবে শর্ত ছিল ভিডিও রেকর্ডিং করতে হবে।
এদিকে বিজেপি বাদে সর্বদলীয় ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে যেকোনো বিশৃঙ্খলা আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তায় গোটা শহর মুড়ে ফেলেছে চেন্নাই পুলিশ। ড্রোন ক্যামেরা, দাঙ্গা প্রতিরোধী গাড়ি, সুইফট অ্যাকশন গ্রুপের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে শহরের বিভিন্ন স্থানে।
এছাড়া সোমবার বেঙ্গালুরুতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। সকাল ১১টার দিকে এক ঈদগাহ্ ময়দান থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। অপরদিকে আইনটির সমর্থনে বেঙ্গালুরুতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে মিছিল করেছে বিজেপি সমর্থকরা।
মোদি সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গত কয়েকদিন উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সোমবার তা অনেকটা নিষ্প্রভ। পাঁচদিন পর ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়েছে এলাহাবাদে। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও বিক্ষোভ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এসেছে।
তবে গতকাল রোববার বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় সোমবার থেকে নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জব্বলপুর জেলায়। এছাড়া দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার অষ্টম দিনের মতো বিক্ষোভ আর মিছিল করেছে তারা।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংসদে উত্থাপনের পর থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রথমে দেশটির উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তাতে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগে ভারতে থাকা অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেবে দেশটির সরকার।
এসএ/জেআইএম