জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০৭:৩৮ এএম, ০১ অক্টোবর ২০১৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার যে আহ্বান জানিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে একাদশ বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ অনুসরণ করে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী  শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রতি জোর দেন।  যেখানে দারিদ্র্য এবং অসমতা, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাত এবং বিদ্বেষ ও বৈষম্য থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ নানা দিক থেকেই বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তিনি এমন এক সময়ে এই ভাষণ দিলেন যখন গোটা বিশ্বে চলছে নানা রকম অস্থিরতা। যুদ্ধ, বিগ্রহ, জঙ্গিবাদসহ নানাবিধ কারণে অনেক মানুষই এখন রাষ্ট্রহীন। অভিবাসন সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বাড়ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য। মধ্যপ্রাচ্যে চলছে ভয়াবহ সন্ত্রাস। আরব দেশগুলোও বিভক্তির চূড়ান্তে অবস্থান করছে। এরফলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকেই তৈরি হয় হতাশা। এরফলে জঙ্গিবাদসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ কারণেই একটি সাম্যের পৃথিবী সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। জঙ্গিবাদ যে কোনো একক দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয় সেটির প্রতিও তিনি বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। দারিদ্র্য এবং অসমতা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। এ কারণে ধনী-দরিদ্রের বিস্তর ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা থেকেও বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বকে নিরাপদ, আরো সবুজ এবং আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সফল হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর প্রতিও জোর দিয়েছেন তিনি।
এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সফলতার কথায় বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত রয়েছে, সেসব চরমপন্থী ও স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় আমরা সদা-তৎপর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টেকসই, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেখানে কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।  ভারতের সঙ্গে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের রাষ্ট্র ফিরে পেয়েছে- এই ঐতিহাসিক ঘটনার কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন তার ভাষণে। একটি বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য যার যা করণীয় রয়েছে সেই দায়িত্বের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দকে। বস্তুত তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে গোটা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজ। এক দেশের সফলতা অন্য দেশের ওপর যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি এক দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা অন্য দেশ বা অঞ্চলের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করে। এ কারণে বৈশ্বিক সমস্যাগুলো ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বৈষম্য কমিয়ে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখার  সুযোগ রয়েছে। উন্নত বিশ্বকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনসহ পরিবেশগত অন্যান্য সমস্যাও মোকাবেলা করতে হবে এক সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক যে ভাষণ দিয়েছেন তার মধ্যে সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছেন। এখন সেই পথে অগ্রসর হওয়াটাই জরুরি।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।