বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত, নিহত ৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় পঞ্চম দিনের মতো টানা বিক্ষোভ করছেন দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। শুধু আসামেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, বিক্ষোভকারীদের আগুনে রোববার পর্যন্ত অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে তিন বিক্ষোভকারীর প্রাণ গেছে পুলিশের গুলিতে। বিক্ষোভ সহিংসতায় বিধ্বস্ত আসাম, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং আসামে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

রোববার আসামের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, পুলিশের গুলিতে চারজন ও দোকানে বিক্ষোভকারীদের আগুনে একজন এবং বিক্ষোভের সময় গণপিটুনিতে একজনের প্রাণহানির ঘটনার পর আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববারও গুয়াহাটিতে ৫ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের সামনে শত শত পুলিশ সদস্যকে নীরব থাকতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে স্লোগান দেন। অনেকের হাতে ‘আসাম দীর্ঘজীবী হোক’, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চাই না’ লেখা ব্যানার দেখা যায়।

আসামের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ি কিছুটা রাজ্যের তেল এবং গ্যাস উৎপাদনে কারফিউয়ের ধাক্কা লেগেছে। তবে অনেকেই দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়।

assam-modi

আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে গেছেন তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। তবে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে আইনে কিছুই বলা হয়নি।

এদিকে বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয়দিনের মতো বিক্ষোভ করছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। এই আইনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় রোববার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। ট্রেন, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।  পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু জেলায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ট্রেন সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নতুন আইনে এই রাজ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন এমন আশঙ্কায় সেখানে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। রোববার আবারও বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে না।

assam-modi

রোববার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে অমিত শাহ বলেন, আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ভাই-বোনদের সংস্কৃতি, ভাষা, সামাজিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক অধিকার আগের মতোই অক্ষুণ্ন থাকবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিমকে এক ঘরে করতে নতুন এই আইনের বাস্তবায়ন করছে বলে মুসলিম মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন। তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশটির একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং একটি মুসলিম রাজনৈতিক দল নতুন এই নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের যুক্তি, নতুন নাগরিকত্ব আইন সংবিধান এবং ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত।

রাজ্যসভায় এ আইন পাসে সমর্থন দিয়েছিল আসামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক জোটসঙ্গী আসাম গণপরিষদ। রোববার আসাম গণপরিষদের নেতারা বলেছেন, তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।