নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গণআন্দোলনের ডাক মমতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে এবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় সংবাদ সম্মেলন করে আগামী রোববার ও সোমবার ‘নো এনআরসি’ আন্দোলনের কর্মসূচির কথা জানিয়ে নিজে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

তৃণমূল দলীয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গে) এনআরসি হবে না। কাউকে কেউ তাড়াতে পারবে না।’ আন্দোলনে তিনি নিজেও অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার লোকসভায় ও বুধবার রাজ্যসভায় পাসের পার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, আগামী রোববার রাজ্য জুড়ে ব্লকে ব্লকে ‘নো এনআরসি’ স্লোগানে আন্দোলন হবে। সব জেলায় মিছিল করবেন দলের কর্মীরা। পরদিন সোমবার কলকাতায় বি আর অম্বেদকরের ভাষ্কর্যের পাদদেশে জমায়েত করবে তৃণমূল কংগ্রেস।

সোমবার ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে ‘বাবা’ আম্বেদকরের ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু করে মিছিলটি ভারতীয় জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ভাষ্কর্য অভিমুখে যাত্রা করবে। তারপর সেই মিছিল যাবে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথা ঠাকুরের বাড়ি পর্যন্ত। তাতে মমতা নিজে নেতৃত্ব দেবেন।

মমতা বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করুন। আমি নিজেও আন্দোলনে যোগ দেব। গায়ের জোরে সিএবি (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) পাস করে নিয়েছে তারা। কিন্তু বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। প্রত্যেক রাজ্যের আলাদা আবেগ আছে, আলাদ বিষয় আছে।’

পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) করতে দেবেন না বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফের হুশিয়ার করে মমতা বলেন, ‘বিজেপি বাংলার পাপ, দেশের অভিশাপ। আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প (বন্দিশিবির) করছে রাজ্য সরকার। সেখানে তাদের দলের সরকার ছিল বলে তা করতে পেরেছে। এখানে তা কোনোভাবেই হতে দেব না।’

মমতা বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কায় ভোগাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘বিতাড়িত হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আপনারা যেমন আছেন, তেমনই থাকবেন। কেউ তাড়াতে পারবে না। এ নিয়ে কেউ ভয় পাবেন না।’ বিজেপির পক্ষ থেকে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান।

ভারতের সংসদে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর ও মেঘালয়। পরিস্থিতি সামাল দিকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সেখানকার বেশ কিছু এলাকায়। বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন।

গত সোমবার সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উত্থাপন করেন। ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি তাদের। বুধবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি (সিএবি) পাস হয়। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করা সেটি এখন আইন।

নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব অমুসলিম ভারতে এসেছেন, তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে আর ভাবা হবে না বরং তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য আসামের বিক্ষোভকারীদের দাবি, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, আর তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, আইনটিতে উত্তরপূর্বের অনেকটা অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।

বিরোধী দলের এমপিরা পার্লামেন্টে মোদি সরকারের প্রস্তাবিত এই বিলটিতে আপত্তি জানালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সরকারকে বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি সরকারকে। বিরোধীরা বলছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষা উপেক্ষা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এসএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।