টাইগারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে বিশেষ মহল!
এই মুহূর্তে কথা ছিল মাঠে অস্ট্রেলিয়ানদের অনুশীলন দেখার। ফটোগ্রাফারদের মুহুর্মুহু ক্লিকের শব্দে মুখরিত হতো মিরপুরের আকাশ। একজন ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে মাঠের কোণে অবস্থান নিতাম অস্ট্রেলিয়ান কোন খেলোয়াড়ের একটু কথা বা মাঠের খেলার তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু হঠাৎই পরিবেশ বদলে গেল। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসছে বলে ঈদের ছুটি ভালোভাবে না কাটিয়ে যান্ত্রিক নগরী ঢাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শুনতে হয়, আসছে না অস্ট্রেলিয়া। তাও কিনা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অজুহাতে?
শুনে তখন এক গাল হেসেছিলাম। বাংলাদেশকে বাঘের মতই ভয় পেলো বুঝি অসিরা! এখন নিরাপত্তার অজুহাতে পাড় পেতে চায়। উপমহাদেশের দুই পরাশক্তি পাকিস্তান ও ভারত যেখানে বাংলাদেশে এসে নাকানি চুবানি খেয়ে গেল তাতে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তার উপর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও নাস্তানুবাদ করেছে টাইগাররা। আর তাই অ্যাসেজ হেরে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের হারিয়ে বাংলাদেশে আসতে হলে বুকের পাটা বড় হওয়াই চাই। তার উপর আবার অসি দলের সেরা তারাকারা মড়কের মত ইনজুরিতে পড়ছে।
কিন্তু এই ভবনাটা মিলিয়ে গেল ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করার পর। আর তাও ঘটলো যখন অস্ট্রেলিয়া তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যখন শন ক্যাননের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল ঢাকায় অবস্থান করছে। এটা কিসের আভাস? এটা কোন ষড়যন্ত্র নয়তো?
অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলকে ‘ভিভিআইপি’ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চার স্তরের নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাসের পরেও মন গলছে না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও জানিয়েছেন, এতকিছুর পরেও তাদের মন যদি না গলে তাহলে ধরে নেবো অন্য কোন কারণ আছে। সম্ভাব্য কোন আন্তর্জাতিক কূটচাল থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। বলেছেন, এতো নিরাপত্তা দেওয়ার পরেও যদি অস্ট্রেলিয়া না আসে আমি অন্তত বিশ্বাস করব না যে ওরা নিরাপত্তার কারণেই আসছে না। ধরে নেব অন্য কোনো কারণ আছে।
অন্য কি কারন হতে পারে? বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ভয় অথবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ যত ভালোই খেলুক টাইগারদের ভয় পাওয়া অস্বাভাবিকই পেশাদার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের জন্য। সরাসরি না বললেও বিসিবি সভাপতি আন্তর্জাতিক যে কূটচালের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা কোন ভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর তা হলে বাংলাদেশের জন্য তা বিরাট অশনি সংকেত।
ক্রিকেট বাংলাদেশিদের কাছে কতটা পবিত্র কতটা আবেগের তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। টেস্ট ক্রিকেটে ঢোকার পর থেকে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে নীবিরভাবে সমর্থন জুগিয়ে এসেছেন দেশের হাজারো ক্রিকেটভক্তরা। একের পর পর লজ্জাজনক হারের পরও মুখ ফেরাননি তারা। একটা আশা নিয়েই মাঠে আসতেন একদিন এই টাইগাররাই ক্রিকেট বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দাপটের সঙ্গে সব প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার সমর্থকরা সেই নীবির ভালবাসার প্রতিদান পাচ্ছিলেন।
টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ দাপটের সঙ্গেই জিতে নেয়। পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত দল গুলোর বিপক্ষে জয় তুলে বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ আগামী দিনে ক্রিকেট পরাশক্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে জিম্বাবুয়েকে সব সংস্করণে ধবলধোলাই করে টাইগাররা জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে এখন অস্ট্রেলিয়া-আফ্রিকাকেই মানায়। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাঠে দাপটের সঙ্গেই লড়াই করেছে টাইগাররা। ইংল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সমান তালে লড়েছে মাশরাফিরা। ভারতের বিপক্ষের আম্পায়ারদের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ না হলে হয়তো আরও লম্বা হতে পারতো টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন।
সারা বিশ্বই যখন এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। এরা আগামীদিনের পরাশক্তি তখনই এক অশুভ ছায়া গ্রাস করতে চাইছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে থামাতে নতুন চালে নেমেছে বিশেষ এক কুচক্রী মহল। এর আগেও বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পাওয়ায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা নাটক করেছে কিছু মহল। সে যাত্রা বাংলাদেশ পাড় করলেও এবার পড়েছে আরও বড় সংকটে। দেশ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় করার স্বার্থে নেমেছে তারা। পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানকে দেখলেই বুঝা যায় একটি দেশে ক্রিকেট না থাকলে তার কি অবস্থা হয়। অসহায়ের মত ডেকে ডেকেও তাদের দেশে যেতে রাজি করাতে পারছে না কোনো দেশকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেকটা এক ঘরে হয়ে পড়া পাকিস্তানের ক্রিকেটের মত করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
অথচ বাংলাদেশ এর আগে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত বড় আসর সাফল্যের সাথে আয়োজন করেছে। পাশাপাশি এশিয়া কাপের আয়োজন করেও প্রশংসিত হয়েছে তারা। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা তো দূরের কথা ন্যূনতম অভিযোগও আসেনি। কিন্তু হঠাৎ করেই শুরু হয়ে গেল জঙ্গি তৎপরতা, ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা। যদিও দেশে এখন জঙ্গি তৎপরতা নেই বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর তা হলে সিজার হত্যার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কোন বড় হাত। পাকিস্তানের মত জঙ্গি ইস্যুকে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা চাইছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে চিরতরে নিভিয়ে দিতে।
ভিত্তিহীন এই অভিযোগ থেকে যদি দ্রুত বেরিয়ে না আসতে পারে বাংলাদেশ তাহলে আগামী দিনে এ দেশের ক্রিকেটের জন্য আরো বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। কারন জঙ্গি ইস্যু ভাইরাসের মতই ছড়ায়। ক্রিকেট ছাড়িয়ে ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলে চলে গেছে এই ভাইরাস। খুব শীগগিরই হয়তো অন্য কোনো দেশ থেকে একই অভিযোগ তোলা হবে। বাংলাদেশ সফর নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সতর্ক করার পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদেরও সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাই এই এক রকম অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট কারণ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির হাতে নেই, রয়েছে কথিত তিন মোড়লের হাতে বন্দি। বাংলাদেশে যখন অস্ট্রেলিয়া দল আসবে ঠিক তখনই বাংলাদেশের মেয়েরা সফর করতে দেশ ছাড়ে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে এক প্রকার নির্বাসিত পাকিস্তানে। মোড়লদের কেউ কেউ বাংলাদেশের এই সফরকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তাই মেয়েদের দল পাকিস্তানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে না আশাকে ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের হাজারো সমর্থকদের। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।
আরটি/এআরএস/পিআর