আস্থা হারাচ্ছেন ইউনূস
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আস্থা হারাচ্ছেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সর্বশেষ রোববার নিউইয়র্কে শেখ হাসিনাবিরোধী বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ।
যদিও ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার ঘটনাকে ভুয়া দাবি করে বলা হয়, ‘অধ্যাপক ইউনূস একটি সভা থেকে আরেকটি সভায় যেতে জাতিসংঘ সদর দফতরের পাশের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। তখন তিনি একটি জটলা অতিক্রম করেন, যেখানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিল। তিনি না থেমেই তার গন্তব্যে চলে যান, যেখানে তার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিল শ্রোতারা।
এদিকে, ইউনূস সেন্টারের প্রকাশিত বিবৃতি নিয়েও ইতিমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভে ড. ইউনূসের যোগ দেয়ার খবরটি অসত্য দাবি করা হলেও পত্র-পত্রিকার খবরে দৃশ্যত হয়েছে যে, ড. ইউনূস বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। প্রকাশিত ছবিতে ইউনূস বিক্ষোভকারীদের মধ্যখানে অবস্থান করে তার স্বভাবসুলভ হাসি হাসছেন।
অপরদিকে, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আয়োজিত এমন কর্মসূচিতে যোগ দেয়া নিয়ে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস আস্থা সঙ্কটে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নোবেল পুরস্কার পেয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও অনেকেই মনে করেন ইউনূস তার নিজস্ব গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন নি। দেশের বিতর্কিত রাজনীতিতে তার কর্মকাণ্ডও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে।
বিশেষ করে ১/১১ পর রাজনৈতিক সঙ্কটকালে রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। ওই সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তি সম্মানেরই হানী করেছে বলে প্রচার রয়েছে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ইয়াজউদ্দিনের কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছেন, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। এতে চারদলীয় জোটের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
ড. ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান সরকারের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় প্রায় তিন বছর আগে। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে সরকার এবং ড. ইউনূসের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে।
অবৈধতার অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে সরিয়ে দিলেও জনসর্মথন ইউনূসের পক্ষেই থাকে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সরকারের পক্ষে গেলেও জনগণ সরকারের এ অবস্থানকে পক্ষপাতদুষ্ট বলেই বিবেচনা করে আসছে।
কিন্তু পদ্মাসেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনায় অনেকেই ড. ইউনূসের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে শুরু করেন। ওই ঘটনায় সরকার ইউনূসবিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় সফলও হয় বটে। ফলে পদ্মা ইস্যুতে ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তায় অনেকটাই ভাটা পড়ে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্যও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ড. ইউনূসকে দোষ দিয়ে আসছেন। ওই নির্বাচনের আগে ড. ইউনূসের বক্তব্য এবং ভূমিকা নিয়ে সরকারপক্ষ ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিল।
২০১৩ সালের ২২ আগস্ট এক মতবিনিময় সভা শেষে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে আগামী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর আগের দিন ২১ আগস্ট, ২০১৩ মিরপুরের ইউনূস সেন্টারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে যারা ধ্বংস করতে চায়, তাদের দেশের প্রতি কোনো মমত্ববোধ নেই। তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া ঠিক হবে নয়।
সর্বশেষ গত রোববার নিউইয়ার্কে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়ার ঘটনায় ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ পান। এতে তার প্রতি জনআস্থাতেও ধস নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরকার পক্ষ ড. ইউনূসকে শত্রুপক্ষ হিসেবে পরিচিতি দিতে যুৎসই ইস্যু পেয়েছে বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
এএসএস/এএইচ/পিআর