ইভটিজিংয়ের বিচার চেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় গৃহবধূ
স্বামী চাকরির সুবাদে থাকেন রাঙামাটি। সরকারি কাজে তাকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। আর স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানদের নিয়ে নড়াইলের আনসার অফিসের পাশে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রতিমাসে একবার যেতে হয় আনসার অফিসে স্বামীর রেশন তুলতে। আর সেখানে গিয়েই নজরে পড়নে আনসার সদস্য ২৮ আনসার ব্যাটেলিয়ন মো. আলম মিয়ার (রেজিঃ নং ৩২১৭৭)। তিনি বিভিন্ন সময় ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন।
৩/৪ মাস একইভাবে জ্বালাতে থাকেন ওই নারীকে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে প্রথমে স্বামীকে জানান স্ত্রী। স্বামী তখন লোক লজ্জার ভয়ে গোপনে আলমকে ফোনে অনুরোধ করে এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেন। কিন্তু আলম বিরত থাকেননি তার কুকর্ম থেকে।
বিভিন্ন সময় আরও বেশি করে ইভটিজিং শুরু করেন। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট ও অধিনায়ক ২৮ আনসার ব্যাটালিয়ন (সিও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিও তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আলমকে বদলির জন্য চিঠি পাঠান নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট এর কাছে। কিন্তু অজানা কোনো কারণে আজ প্রর্যন্ত নড়াইল থেকে তাকে বদলি করা হয়নি। অথচ প্রতি মুহূর্তে আলম ওই গৃহবধূকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ তুলে নিতে।
অভিযোগ না তুললে সন্তানদের মেরে ফেলার ভয়ও দেখাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সেই ভয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন ওই গৃহবধু।
গৃহবধূর স্বামী জাগো নিউজকে জানান, আমি সরকারি চাকরি করি। আমার দুই সন্তান। যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার কাছে রাখা সম্ভাব হয়না। সেজন্য আমার স্ত্রী আমার সন্তানদের নিয়ে নড়াইলে থাকে। আমি বিষয়টি আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে আমার স্ত্রীর কাছে শুনতে পেয়ে আলমকে ফোনে বলি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য। কিন্তু আলম তার চরিত্রের পরিবর্তন না করার ফলে আমি বিষয়টি লিখিত অভিযোগ করতে বলি আমার স্ত্রীকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা থেকে বদলির নির্দেশ দেয়া হলেও এখনো তাকে নড়াইল থেকে বদলি করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট।
তিনি আরও জানান, গত ১৫ আগস্ট রাত ১১.৩৮ মিনিটে ফোন দিয়ে আলম হুমকি দিয়ে বলেন, তুই বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্ত তোর সন্তানদের মুখ দেখতে পারবিনা। আমি নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট মো. আতাউর স্যারকে বিভিন্ন সময় অনুরোধ করি বিষয়টির একটি সুরহা করতে। কিন্তু স্যার এখন প্রর্যস্ত কোনো বিচার করেননি।
অভিযোগ আছে নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট মো. আতাউর রহমার একজন দুর্নীতিগ্রস্থ অফিরার আর এসকল কাজের সব লেনদেন হয় এই অভিযুক্ত আলমের মাধ্যমে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৮ আনসার ব্যাটালিয়ন থাকাকালে চার শতাধিক আনসার সদস্যদের এসিআর (বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদন) না দিয়ে চলে আসেন বর্তমান নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট মো. আতাউর রহমান।
আর এসকল আনসার সদস্যদের এসিআর অতি প্রয়োজনীয় হওয়ায় রাঙামাটি থেকে নড়াইলে এসে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসিআর নিতে হয়।
রাঙামাটি থেকে এসিআর নিতে আসা আনসার সদস্য বিল্লাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমি রাঙামাটি থেকে এসিআর নিতে এসে ৩ দিন নড়াইলে বসে থেকে ১৫শ টাকা টাকা দিয়ে এসিআর নিতে হয়েছে।
অভিযুক্ত আনসার সদস্য আলমকে অফিসে যেয়ে পাওয়া যায়নি তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এদিকে নড়াইল জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট মো. আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে কিন্ত জজ আপনি যা করবেন হিসাব করে করবেন।
হাফিজুল নিলু/এমজেড/এমএস