মনোবল ভাঙতে কাশ্মীরি নারীদের ধর্ষণে মেতেছে ভারতীয় বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

মনোবল ভাঙতে ও বেসামরিক কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে।

নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে বিশ্বজুড়ে ১৬ দিনের এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচি চলাকালীন এমন দাবি করলো নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন। গত ২৫ নভেম্বর এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রত্যেক বছর এই দিনটিকে বিশ্বজুড়ে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে চলতি বছর বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যাশা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলছে, কাশ্মীরে যারা ভারতীয় দখলদারিত্বের অবসানের দাবি করছেন, তাদের মনোবল ভেঙে দিতেই ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী সেখানকার নারীদের টার্গেট করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরি নারীদের প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করলেও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিতভাবে দায়মুক্তি পাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুদ্ধ এবং শান্তির সময়ও যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণে বেঁচে যাওয়া নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসানের এটাই সময়।

জাতিসংঘের কর্মকর্তা মারিয়া লুইজা ভিওট্টি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন কাজে বের হয়ে নারীদের সঙ্গে কথা বলি, তখন জানতে পারি প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

‘কিছু কিছু অঞ্চলে এবং কিছু নারীর ক্ষেত্রে যৌন সহিংসতার হার অনেক বেশি; এটাই একমাত্র সহিংসতা যা জানা যাচ্ছে। তবে এর প্রকৃত চিত্র আরও অনেক বেশি হবে।’

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও বলেছেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা একটি বৈশ্বিক ইস্যু; যা বছরে লাখ লাখ নারী এবং তরুণী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমনকি তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ও আক্রান্ত। এটি জীবনের সমস্ত দিককে প্রভাবিত করছে। এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এবং বাড়িতেও বিদ্যমান।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর ‘ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতাসহ’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বলপ্রয়োগপূর্বক আটকে রাখা, বেআইনি কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যু, গুম, দুর্ব্যবহার এবং নির্যাতনের নানা অভিযোগ এক প্রতিবেদনে নথিভূক্ত করেন।

এই প্রতিবেদনে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৯০ এ যে অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে; সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এই আইনে সামরিক বাহিনীকে রাষ্ট্র পুরোপুরি দায়মুক্তি দিয়েছে। যুদ্ধ-সংঘাতে যৌন সহিংসতাবিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন বলেছেন, তিনি মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তার মনে হয়েছে, যৌন সহিংসতার বিষয়টির অবসানের এখনই উপযুক্ত সময়। প্যাটেন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টির অবসান অনিবার্য ছিল; কিন্তু হয়নি। বর্তমানে এটাকে প্রতিরোধযোগ্য হিসেবে বোঝা উচিত।

গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেয় ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার। এই বিশেষ মর্যাদা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এখন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভেঙে দুটি অঞ্চল করা হয়েছে।

কাশ্মীরিরা দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রতিনিয়ত সেখানে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে কাশ্মীরিদের সংঘাত, সংঘর্ষে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে।

সূত্র : ডন।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।