মুম্বাইয়ের হোটেলে মহারাষ্ট্রের ১৬২ বিধায়কের শপথ
ভারতের মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে অচলাবস্থা কাটছেই না। গতকাল মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারকা হোটেলে নিজ দলের বিধায়কদের একত্রিত করেছে শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস। সেখানে তারা দলীয় বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করান। সন্ধ্যায় বিধায়করা শপথ নিয়ে বলেন, তারা কোনো কুপ্রস্তাবে পা দেবেন না।
মহারাষ্ট্রের বিধায়করা এই বলে শপথ নেন যে, ‘আমি কারও কোনও কুপ্রস্তাবে পা দেব না। কোনোভাবেই বিজেপিকে সমর্থন করবো না। দলবিরোধী কোনও কাজ করবো না।’ বিধায়কদের হোটেলের যে হলঘরে রাখা হয়েছিল, সেখানে পোস্টারে লেখা ছিল ‘আমরা ১৬২’ আর তার পেছনে ছিল ভারতীয় সংবিধানের বিশাল ছবি।
সেখানেই মহারাষ্ট্রের বিধায়করা একজোট হয়ে আলোচনা করেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা শারদ পাওয়ার এবং তার মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে। এছাড়াও ছিলেন বিজেপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং তার ছেলে আদিত্য ঠাকরে। ছিলেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গেও।
বিধায়কদের উদ্দেশে সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘বড় আয়তনের ছবি তোলার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা প্রয়োজন আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ‘সত্যমেব জয়তে’ (সত্যের জয়) বিশ্বাস করি। আমরা সবাইকে ভাঙন ধরাবার চ্যালেঞ্জ করছি।’
এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার বলেন, ‘সমস্ত এনসিপি বিধায়করাই তার সঙ্গে আছেন। এখানে ১৬২জন বিধায়ক রয়েছে, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।’ মহারাষ্ট্রে নাটকীয়ভাবে এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারকে নিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করার পর তা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায় দেবে।
বিধায়কদের জমায়েতে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারিকে উপস্থিত থাকার ‘আমন্ত্রণ’ জানিয়েছিলেন বলে শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত এক এর আগে এক টুইট বার্তায় জানান, ‘আমরা সবাই এক এবং একসঙ্গে রয়েছি। সন্ধ্যা ৭টায় হায়াত হোটেলে আমাদের ১৬২ জন বিধায়ক একসঙ্গে থাকবেন। নিজেই এসে দেখুন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল।’
তিন দলের জোট ‘মহারাষ্ট্র বিকাশ অগধি’ বলছে, গতকাল সোমবার সকালে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে তারা সরকার গঠনের দাবি জানায়। তিনদিন আগে শনিবার সকালে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন অজিত পাওয়ার। তাতেউ উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের রাজনীতি।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জোটের সঙ্গে বসার আগে এক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের ভাতিজা অজিত পাওয়ার। যেখানে তিনদলের জোট ঘোষণা করে, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করে জোট সরকার গঠন করবে তারা।
জোট সরকার গঠনের জন্য এনসিপির বিধায়করা যে সমর্থনের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সেই চিঠি রাজ্যপালকে দিয়ে বিজেপি অজিত পাওয়ারকে নিয়ে পরদিন সকাল ৮টায় সরকার গঠন করে তাদের নেতা দেবেন্দ্র ফডনবিশকে মুখ্যমন্ত্রী ও অজিত পাওয়ারকে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেয়ায়। তাতে রাতারাতি পাল্টে যায় মহারাষ্ট্রের দৃশ্যপট।
শরদ পাওয়ার গতকাল বলেন, ‘অজিত পাওয়ার এটা করেছিলেন এই ভেবে যে এনসিপি তার সঙ্গে যাবেন। তবে তা হয়নি। এটা মহারাষ্ট্র, গোয়া নয়। আমরা জানি আগুন নিয়ে যারা খেলে, তাদের আমরা শিক্ষা দিতে জানি। এখানে এই খেলা দিয়ে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। তার বক্তব্যে বিধায়কদের হাততালির ঝড় ওঠে।
শিবসেনা জানিয়েছে, নির্দলীয়সহ ৬৩ জন বিধায়কের স্বাক্ষর করা সমর্থনের চিঠি তারা জমা দিয়েছে। কংগ্রেসের ৪৪ এবং এনসিপির ৫১ জনেরও জোট সরকারে সমর্থন রয়েছে। এছাড়া তিন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমাজবাদী পার্টিও। তাদের দলেরও দুজন বিধায়কের স্বাক্ষর করা চিঠি দেয়া হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টে শিবসেনা-এনিসিপি-কংগ্রেস দাবি করে, তাদের পক্ষে ১৫৪ জনের সমর্থন রয়েছে। সু্প্রিম কোর্টে বিজেপি জানিয়েছে, তাদের ১৭০জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে, তারমধ্যে ৫৪জন এনসিপির। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বলা হয়, রাজ্যপাল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সমর্থনের চিঠির ভিত্তিতেই।
এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের লেখা একটি চিঠিও জমা দেয় বিজেপি। যেখানে ফডণবিশ সরকারকে এনসিপির সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। এদিকে এনসিপি গতকাল আদালতে চিঠি দিয়েছে তাতে তিনজনের স্বাক্ষর নেই। তারা হলেন, অজিত পাওয়ার, আন্না বানসোড় এবং নরহরি ঝিরওয়াল।
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসন বিশিষ্ট বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ২৪ অক্টোবর। বিজেপি ১০৫, শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ ও কংগ্রেস ৪৪ আসনে জয়ী হয়েছে। সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৪৫ আসন। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১৬২ বিধায়ককে একজোট করেছে এনসিপি, শিবসেনা ও কংগ্রেস।
এসএ/এমকেএইচ