গুলিতে সাংবাদিকের চোখ হারানোর প্রতিবাদে সবার চোখে ব্যান্ডেজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলিতে ফিলিস্তিনি এক সাংবাদিক চোখ হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনি এই সাংবাদিকের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা চোখে ব্যান্ডেজ পরে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর বলছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভকারীদের ছবি তুলতে গিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ছোড়া গুলিতে চোখ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনি এক ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী। এ ঘটনার পর বিশ্বের নানা প্রান্তের সাংবাদিকরা তাদের এক চোখ কাপড়ে ঢেকে কিংবা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ওই সাংবাদিকের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ছবি পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

গত শুক্রবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ কাভার করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি এসে লাগে মুয়াথ আমারনেহ (৩৫) নামের ওই আলোকচিত্রীর বাম চোখে। পশ্চিম তীরের দক্ষিণের হেবরনের সুরিফ গ্রামে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে মুয়াথ বাম চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের হাদাসসাহ মেডিক্যাল সেন্টারে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে অনলাইনে “মুয়াথআই (MuathEye)”, “আইঅবট্রুথ”, “মুয়াথআমানেহ” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইন করেছেন সাংবাদিকরা। মুয়াথ আমানেহকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এই ক্যাম্পেইন শুরু হতেই মুহূর্তের মধ্যেই তা ট্রেন্ড হয়ে যায়।

muath-eye

শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা পশ্চিম তীরের সুরিফ গ্রামের জমি দখল নিতে গেলে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। আলোকচিত্রী মুয়াথের স্বজনরা বলছেন, মুয়াথের বাম চোখ বাঁচানো যাবে না বলে হাদাসসাহ মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন। গুরুতর আঘাত পাওয়ায় চোখটি দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন।

ইসরায়েলি বাহিনী তাকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছিল বলে আমারনেহর সহকর্মীরা দাবি করেছেন। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাকে টার্গেট করা হয়নি। তারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুধুমাত্র নন লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

৩৫ বছর বয়সী ওই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনি বিক্ষোভস্থলের পাশে একটি ফ্ল্যাক জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতে পরিষ্কারভাবে প্রেস লেখা ছিল।

তিনি বলেন, হঠাৎ আমি বুঝতে পারি, আমার চোখে কিছু একটা আঘাত করেছে। আমার ধারণা সম্ভবত এটি রাবার বুলেট অথবা পাথর। হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরি। এ সময় আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।

muath-eye

আমারনেহর প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা তাদের এক চোখ ঢেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর সহিংসতা ও দখলদারি ও বিক্ষোভের ঘটনা কাভার করার সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করতে অন্যদেরও একইভাবে ছবি তুলে পোস্ট করার আহ্বান জানান তারা।

দ্য ন্যাশনালের ডেপুটি ফরেইন এডিটর ডেক মুর টুইটারে লেখেন, সত্যের চোখ কখনও অন্ধ হবে না। আজ চোখ হারানো মুয়াথ আমারনেহর চোখে গুলির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের কয়েকডজন সাংবাদিক।

ডেক লিখেছেন, আমারনেহ প্রেস লেখা পোশাক পরেছিলেন। এ বছরে অন্তত ৬০ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি হ্যাশট্যাগে লিখেছেন, মুয়াথআই (#MuathEye #عين_معاذ)।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।