ওয়াইসির ‘মসজিদ ফেরত চাই’ মন্তব্যে অনলাইনে ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির তৈরির পক্ষে রায় ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে অনলাইনে নানামুখী বিতর্ক এখনো চলছে। রায় নিয়ে ভারতের শীর্ষ মুসলিম সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র বিভক্তি দেখা যাচ্ছে।

মামলার অন্যতম পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায় মেনে নেয়ার কথা ঘোষণা করলেও, তাদের আইনজীবীরা এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এর বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার কথা বিবেচনা করছেন। অন্যত্র একটি মসজিদ বানানোর জন্য যে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করেছে তা নিয়েও মুসলিম সমাজের নেতারা একমত নন।

আর এসবের মধ্যেই অনলাইনে নতুন হইচই শুরু হয়েছে ভারতের একজন মুসলিম নেতা এবং এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এক টুইট নিয়ে। বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের রায় নিয়ে গত ১৫ই নভেম্বর এক টুইট বার্তায় ওয়াইসি বলেন, ‘আমি আমার মসজিদ ফেরত চাই’

তার সাথে তিনি জুড়ে দেন আউটলুক পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকার, যাতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা না হলে কি সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিতে পারতো?’

রায় ঘোষণার পরপরই আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদের যে খয়রাতির ৫ একর জমি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে তা মুসলিম সম্প্রদায় চায় না। মসজিদ নির্মাণে মানুষের কাছে চাইলেই এই জমি পেতে কোনো সমস্যাই হবে না। সরকারের খয়রাতি জমির কোনো প্রয়োজন নেই।’

হায়দরাবাদের এই সাংসদ এর আগে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের আইনি অধিকারের জন্য লড়ছি। ভারতের মুসলমানদের এত খারাপ দিনও আসেনি যে খয়রাতির জমি নিতে হবে। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলো, মুসলিমদের এই ৫ একরের প্রস্তাব খারিজ করা উচিত।’

Babri
১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দু করসেবকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হচ্ছেন ভারতীয় মুসলিমদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন বা এআইএমআইএম-এর প্রধান এবং হায়দরাবাদের এমপি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে টুইটারে ওয়াইসির অনুসারীর সংখ্যা প্রায় সাত লাখ।

ওয়াইসির টুইট বার্তা ‘আই ওয়ান্ট মাই মস্ক ব্যাক’ অর্থাৎ ‘আমি আমার মসজিদ ফেরত চাই’ - টুইটারে হ্যাশট্যাগে পরিণত হয় এবং এর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর মন্তব্য পড়তে থাকে। টুইটটি এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ বারেরও বেশি রি-টুইট হয়েছে, লাইক দিয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি। এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন ২২ হাজারেরও বেশি।

সালিল শেখ নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আমিও চাই।’ ইরিনা আকবর নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘একসময় বাবরি মসজিদ বলে একটি মসজিদ ছিল, যা ১৫২৮ সালে তৈরি হয়, ১৯৪৯ সালে অপবিত্র করা করা হয় এবং ১৯৯২ সালে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু আমাদের স্মৃতিতে এ মসজিদ চিরদিন থাকবে।’

কোসার পারভেজ নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আমাদের ভারত মহান, তারা (নাথুরাম) গডসেকে হিরো (নায়ক) বলে মানে, আর গান্ধীকে বানায় ভিলেন।’ শুধু টুইটারে নয় অনলাইনে নানা ওয়েবসাইটে নিবন্ধ লেখা হচ্ছে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে।

‘দি ওয়্যার’ নামে ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে নন্দিনী সুন্দর নামে একজন লেখেন, ভারতের মুসলিমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল তাদের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা চেয়ে কিন্তু তাদের দেয়া হয়েছে পাঁচ একর জমি। তিনি লেখেন, শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের ভিত্তিতেই স্থায়ী শান্তি ও মৈত্রী পুনঃপ্রতিষ্ঠা হতে পারে।

‘স্ক্রল ডট ইন’ নামে আরেক ওয়েবসাইটে নরেশ ফার্নান্দেজ লেখেন, বাবরি মসজিদ যারা ধ্বংস করেছিল শুধুমাত্র তাদের বিচারের আওতায় আনার মধ্যে দিয়েই অযোধ্যা মামলায় ন্যায়বিচার হতে পারে। অবশ্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মন্তব্যের বিপক্ষেও মন্তব্য করেন অনেক মানুষ।

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং বিজেপির নেতা ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলেন, আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হচ্ছেন দ্বিতীয় জাকির নায়েক। একই রকম প্রতিক্রিয়া দেন আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তিনি বলেন, ওয়াইসি সমাজে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

ববি সিং নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আমি এমন এক ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে বাস করি যেখানে ‘আমি আমার মসজিদ ফেরত চাই’ বলাটা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ অধিকার কিন্তু আমি যদি বলি ‘আমি আমার মন্দির ফেরত চাই’ তাহলে তার অর্থ হচ্ছে ঘৃণা।

টুইটারে ওয়াইসিকে নিয়ে ফরাজ শেখ নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘ইনি শুধু ভোট ব্যাংকের জন্য পানি ঘোলা করছেন। অমৃতা ভিন্দার নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আমরা পেছন দিকে তাকিয়ে থাকলে সামনে এগোতে পারবো না।’

তানভির আশরাফ নামে একজন বলেন, ‘আমি সকল মুসলিমের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, এ ধরনের লোককে এড়িয়ে চলুন, যারা ভারতীয়দের ধর্মের নামে বিভক্ত করতে চায়।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আসাদ ওয়াইসি ২১ কোটি মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব করেন না।’

টুইটারে ‘আই ওয়ান্ট অল মাই টেম্পলস ব্যাক’ নামে পাল্টা হ্যাশট্যাগও চালু হয়। শ্রীকান্ত নামে একজন লিখেছেন, তিনি তার ত্রিশ হাজার মন্দির ফেরত চা্ন, যা মোগল জিহাদিরা ধ্বংস করে। একাধিক লোক মসজিদের তালিকা তুলে দেন, যেগুলো তাদের মতে মন্দিরের ওপর নির্মিত। অনেকে ওয়াইসিকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন