ব্রিটিশ নির্বাচন : এক মুসলিম অভিবাসীর কাছে হারছেন বরিস?
ব্রেক্সিট নিয়ে টানা টানাপোড়েনের পর অবশেষে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আগাম নির্বাচনে সম্মতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণাও। তবে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী প্রধামন্ত্রী বরিস জনসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কেননা ওই আসনে বিরোধী লেবার পার্টির এক মুসলিম অভিবাসী প্রার্থী তাকে টক্কর দিচ্ছেন সমানে সমানে।
কনজারভেটিভ দলীয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের অক্সব্রিজ এবং সাউথ রুস্লিপ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত। এলাকাটি রাজধানী লন্ডনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। বিরোধী দল লেবার পার্টি ওই আসনে এক অভিবাসী মুসলিমকে মনোনয়ন দিয়েছে। আলি মিলানি নামের ওই প্রার্থীর বয়স মাত্র ২৫ বছর।
এক দশক আগেও আসনটি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নিরাপদ আসন হিসেবে বিবেচিত হলেও গত নির্বাচনে বরিস জনসন সামান্য ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে দশ হাজার ভোটের ব্যবধানে লেবার প্রার্থীকে তিনি হারালেও সর্বশেষ ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছেন।
আগামী ১২ ডিসেম্বরে দেশটিতে নির্বাচন। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর লেবার পার্টির প্রার্থী আলি মিলানের সমর্থনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ খবর জানিয়ে বলছে, বরিস জনসনের জন্য ওই আসনে নির্বাচিত হওয়া এবার বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে লেবার পার্টির উচ্চমহল থেকেও ‘বরিস হটাও’ প্রচারণার অংশ হিসেবে ব্যাপক জনসংযোগ চালানো হচ্ছে। বিরোধীরা বলছেন, ওই আসনে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অবস্থা শোচনীয়। তার প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। গত নির্বাচনের চেয়ে কিছু ভোট বেশি পেয়ে এবার সেখান বরিসকে হারানোর ব্যাপারে দলটি আত্মবিশ্বাসী।
ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে হলে কোনো প্রার্থীকে তার সংশ্লিষ্ট আসনের বাসিন্দা হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরিস জনসন উক্সব্রিজে বসবাস করেন না। তবে সম্প্রতি ওই এলাকার ভোটারদের সঙ্গে দেখা করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে তাকে।
অপরদিকে আলি মিলানি নিজেকে স্থানীয় হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। বরিস ওই আসনের বাসিন্দা নন এমন সুযোগ তিনি কাজা লাগাচ্ছেন এই পরিচয়ে দিয়। অক্সব্রিজের বাসিন্দা আলি মিলানি ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেখানকার ছাত্রনেতা হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিলেন।
আলি মিলানির জন্ম ইরানের রাজধানী তেহরানে। তার বয়স যখন পাঁচ তখন মা ও বোনের সঙ্গে তেহরান থেকে লন্ডনে আসেন তিনি। সরকারি বৃত্তি ও আবাসন সুবিধা নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব বরিসের জন্ম নিউইয়র্কে। বাবা ছিলেন কূটনীতিক। মা চিত্রশিল্পী। পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। আছে সাংবাদিকতার খ্যাতি।
অক্সব্রিজের বাসিন্দা ২২ বছর বছর বয়সী শিক্ষার্থী কায়লা মার্টিন বলেন, ‘জনসন আমাদের সংবিধানকে সম্মান করেন না। দুই বছর আগে তার প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল। কিন্তু আমি মনে করি, এখন বরিস জনসনকে ভোট দেয়া নিয়ে অনেকে তাদের মত পাল্টেছেন।
স্থানীয় বসিন্দাদের জন্য কিছু না করায় বরিসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে ৬৩ বছর বয়সী ইয়ান রিচি বলেন, ‘তিনি হয়তো খুব চেষ্টা করবেন তার আসনটি ধরে রাখতে কিন্তু এবার তেমনটি নাও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি আমাদের স্থানীয় ইস্যুগুলো নিয়ে কথা না বলায় আমরা উদ্বিগ্ন।’
ওয়েস্ট ড্রেটনের এক বাসিন্দা বলছেন, ‘আমাদের গোটা দেশ এখন সম্পূর্ণরুপে বিভক্ত এবং ভীতিকর একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমি ভোট দিতে যাবো, তবে আমি মনে করি দেশ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিশ বছর আগে আমি এই দেশকে যা জানতাম আজ আর তা নেই। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে আগের মতো ইংল্যান্ডকে এখন আর পাই না।’
এসএ/এমএস