মিনায় পদদলিত হয়ে নিহত ২ হাজার!


প্রকাশিত: ০৬:৪৭ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ফাইল ছবি

সৌদি আরবের মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে নিহত হাজিদের সংখ্যা ও সঠিক পরিচয় এখনো জানাতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর মাঝে ইরানের অন্তত ১৩১ জন হাজি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। ইরানের প্রেসিডেন্ট এ ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের হজ ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

এছাড়া মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় অন্তত ২ হাজার হাজি নিহত হয়েছে বলে সৌদি সূত্রের বরাত দিয়ে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের অনলাইন সংস্করণে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে মিনায় শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মারতে আসা প্রায় ১৩০০ হজযাত্রীর প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে প্রাণ হারান। কোনো কোনো সৌদি সূত্র নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার বলে উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় ১৩১ জন ইরানি হজযাত্রী নিহত ও  নিখোঁজ রয়েছেন দেশটির ৩৬৫ জন।

এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে যেসব ভুল ব্যবস্থাপনা ও অসঙ্গত পদক্ষেপের কারণে মিনায় এই ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে তা গোপন করা ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। ইরান অন্যান্য দেশের হাজিদের সম্ভাব্য সব সহায়তা দেবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মক্কার মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ৭১৭ জন হাজি নিহত হয়েছেন। গত ২৫ বছরের মধ্যে মিনার এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো আট শতাধিক হাজি।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব মিনার মর্মান্তিক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। বান কি মুন নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে দায়-দায়িত্ব পালন করতে সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ দুর্ঘটনার পর হজ সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সৌদি বাদশাহ বিষয়টি আরো উন্নত করা যায় কিনা সে কথা স্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে ভয়াবহ এই বিপর্যয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজিরা যথাযথ নির্দেশনা মেনে চলেননি বলে অভিযোগ করেছেন সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী । কিন্তু তার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাজিরা। তারা বলছেন, সৌদি পুলিশ সদস্যরা একেবারেই অনভিজ্ঞ। পুলিশ সদস্যদের অনেকেই হাজিদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি। এমনকি তারা হাজিদেরকে সঠিক রাস্তাও দেখিয়ে দিতে পারেননি।

এদিকে, লেবাননের আরবি দৈনিক আদদিয়ার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সৌদি বাদশাহর ছেলের গাড়ি বহরই প্রাণঘাতী এ বিপর্যয় সৃষ্টির মূল কারণ।

তার বিপুল গাড়ি বহর ও নিরাপত্তা প্রহরা মিনার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। এসময় তার সঙ্গে ছিল ২০০ সেনা ও ১৫০ পুলিশ কর্মকর্তা। সৌদি সরকার এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য  হজের সময় মিনায় সালমানের সফর বা তার উপস্থিতি সংক্রান্ত খবর প্রচার নিষিদ্ধ করেছে বলে লেবাননি দৈনিকটি উল্লেখ করেছে।

মক্কায় হজ পালনের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০ লাখ হাজি অবস্থান করছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের নিরাপত্তার জন্য এক লাখ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এসব পুলিশ সদস্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বিদেশিদের সঙ্গে ভালভাবে যোগাযোগও করতে পারেন না।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।