এশিয়ার কয়লা আসক্তি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে : গুতেরেস
জলবায়ু পরিবর্তন যদি মোকাবিলা করতে চায় তাহলে এশিয়াকে অবশ্যই তার কয়লা আসক্তি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে এমন সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে এশিয়ার দেশগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন এবং ভারত সেই তালিকায় আছে সবার উপরে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য হুমকি বলে বিবেচিত কয়লা আসক্তি বন্ধ তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বন্যার বিশেষ ঝুঁকিতে আছে এশিয়ার দেশগুলো। আর এশিয়ার অনেকে দেশ এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ব্যবহার করে। সেই গবেষণার প্রসঙ্গ টেনেই জাতিসংঘ মহাসচিব এশিয়ার দেশগুলোকে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে নির্ধারিত একটি সমস্যা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। আগে যা আশঙ্কা করা হতো তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিভিত্তিক জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রাল। নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত ওই গবেষণা নিবন্ধ থেকে জানা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে বন্যার কবলে পড়বে বিশাল একটি এলাকা। যেখানে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের বসতি।
নাসার গবেষকরা এর আগে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানিয়েছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচালিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, ৮ কোটি নয় সংখ্যাটা ৩০ কোটি এবং এর বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ‘গবেষণায় ৩০ কোটি মানুষের গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে আপনারা হয়তো আলোচনা করতে পারেন, কিন্তু এই লক্ষণ যে দেখা দিতে শুরু করেছে তা কিন্তু খুব পরিষ্কার। এশিয়ায় এই ইস্যুটি আরও বিশেষভাবে সংবেদনশীল। তবুও ওই অঞ্চলে নতুন করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া। বাংলাদেশ এবং চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের চার কোটি ২০ লাখ এবং চীনের ৯ কোটি ৩০ লাখ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড, এই কয়েক দেশের ২৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশ ও চীন ছাড়াও এই ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতের ৩ কোটি ৬০ লাখ, ভিয়েতনামের ৩ কোটি ১০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ার ২ কোটি ৩০ লাখ এবং থাইল্যান্ডের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
এসএ/এমএস