রাত পোহালেই ত্যাগের ঈদ
রোজার ঈদ নিয়ে নিয়মিতই যেমন থাকে আজ’না কাল’ এমন অনিশ্চয়তা। তেমন অনিশ্চয়তা কোরবানির ঈদের ক্ষেত্রে থাকে না। কারণ জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এই ঈদের দিনটি নির্ধারিত। তাই জিলহজের চাঁদ ওঠার আগেই ঈদের দিন ঠিক হয়ে যায়। ফলে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মুসলিম সম্প্রদায়ের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। পবিত্র হজও পালিত হয়েছে গত বুধবার। এখন অপেক্ষা কেবল রাত পোহানোর। ভোর হলেই ১০ জিলহজ, শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আজহা।
মহান আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। ঘরে ঘরে ত্যাগের আনন্দে মহিমান্বিত হবে মন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। তবে ঈদের পরও দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান আছে।
শুক্রবার সকালেই মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে আসবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায়ের জন্য। খতিব নামাযের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামায আদায় করবেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঈদের নামায আদায় করবেন জাতীয় ঈদগাহে। সেখানে সকাল ৮টায় জামাত হবে।
নামায শেষে অনেকেই যাবেন কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে করজোড়ে মোনাজাত করবেন তারা।
এরপর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করবেন।
ঈদুল আজহায় পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি কেনাকাটা গৌণ। এই ঈদের প্রস্তুতির মধ্যে প্রধান বিষয় হলো পশু ক্রয়। অবশ্য যারা ঈদের উৎসবে রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোনো শহরের কর্মস্থল থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন তাদের প্রস্তুতি শুরু হয় যানবাহনের টিকিট সংগ্রহ করা থেকে। এরপর যাত্রা করা।
মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা থেকে ঘরে ফেরার পালা শুরু হয়েছে। বুধবার শহরের সড়কগুলো ছিল আধা ফাঁকা। ভিড় ছিল পশুর হাট, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে। ঈদের যাত্রায় ভোগান্তি কম নয়, এবারও তার কোনো হেরফের হয়নি। প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের আনন্দ, আপন ঠিকানায় ফেরার অনুভূতির তুলনায় যাত্রার দুর্ভোগ মনে নিয়েই সপরিবারে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে উত্তরের যাত্রীরা আটকে আছেন পথে। যানজট আর ভোগান্তি তাদের সঙ্গী হয়েছে।
শুভেচ্ছা: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ঈদুল আজহার মর্মবাণী আমাদের শিক্ষা দেয় পরমতসহিষ্ণু, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তি-সম্প্রীতিময় বিশ্বসমাজ গঠন করার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বিভেদ-বৈষম্যহীন সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ঈদের আয়োজন: দেশের সংবাদপত্রগুলো বরাবরের মতোই পবিত্র ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশন ও বেতার থেকে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এ ছাড়া ঈদের দিনে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র ও সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
এসএ/একে