ঈদ এলেই
উৎসব পার্বণ উপলক্ষে সাধারণত বিশেষ বিশেষ পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী চাহিদা বাড়লে সেই জিনিসের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে তাহলে দামও ঠিক থাকার কথা। বরঞ্চ বেশি বিক্রি হওয়ায় অল্প লাভ করে বিক্রি করলেও তাতে মুনাফা হয় বেশি। কিন্তু আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় এই বিষয়টি কার্যকর নেই। বরং যে জিনিস যতো বেশি চলবে তার দামও হবে আকাশচুম্বী। এই প্রবণতা এবারও দেখা যাচ্ছে বাজারে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বাজারে মসলার দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। কাচা মরিচ ঠেকেছিল ৩০০টাকা কেজিতে। অথচ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। যদিও ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির কথা বলছেন।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২২-২৩ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশের কৃষকরা গত মৌসুমে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন। দেখা যাচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। এরজন্যই ভোক্তাদের পকেট কাটা হবে?
পাইকারি বাজারে সপ্তাহ খানেক আগে কেজি প্রতি ২৩৫ টাকা থেকে ২৯০ টাকায় জিরা বিক্রি হলেও তা এখন ৩৩০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সময়ে কালোজিরার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কয়েকদিন আগে কেজি প্রতি ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় কালোজিরা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৪০০ টাকা থেকে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠু মনিটরিং এর অভাবে খুচরা বাজারে পণ্যমূল্য দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। যেসব খুচরা ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে মসলার দাম রাখবেন তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার কি কেউ নেই? পেঁয়াজের দাম কেন ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি হয় এর জবাবই বা কে দেবে? এখন অবশ্য পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে বাজারভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনেক সময় অনেক নির্দেশনা জারি করে। টিসিবিকে সক্রিয় করে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়। কিন্তু আখেরে কাজ দেয় না কিছুই। ফলে সিন্ডিকেটচক্র অবাধে মুনাফা লুট করার সুযোগ পায়। যদি সত্যিকার অর্থে বাজার ব্যবস্থাপনা বলে কিছু থাকতো তাহলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট খালি করতে পারতো না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, আজ পর্যন্ত বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। অন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির কারণে কারও শাস্তিও হয়নি। এই কারণে মৌসুম বুঝে ব্যবসা করেই যাচ্ছে ওই চক্র। ঈদ বা কোনো পার্বণ উপলক্ষ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের মুনাফা। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। শুধু আইন-কানুন দিয়েও কিছু হবে না। ন্যায়-নীতি বোধেরও উন্মেষ ঘটাতে হবে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
কোনো উৎসব বা পার্বণ যাতে মানুষজন ভালোভাবে পালন করতে পারে সেটির নিশ্চয়তা দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
এইচআর/পিআর