অলস সময় পার করছেন রাজবাড়ীর লৌহ কর্মকাররা
কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ধর্মীয় বিধান ও মুসলমান সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী পশু জবাই করে কোরবানি করা ফরজ।
আর এ কোরবানিতে পশু জবাই করতে প্রয়োজন যে লোহার ধারালো চাপাতি, ছুরি বা বটি ইত্যাদি লোহার যন্ত্রপাতি। কোরবানি ঈদ সামনে থাকলেও এবার অলস সময় পার করছেন এই যন্ত্রপাতি তৈরির রাজবাড়ীর কামার পট্টির কামার শিল্পীরা।
সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কাজ করে থাকেন তারা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাজ নেই বলে তাদের অভিযোগ। তবে পাল্টা অভিযোগ ক্রেতাদের। কারণ, প্রতিবারের তুলনায় নতুন বানানো যন্ত্রপাতি ও পুরাতন যন্ত্রপাতি মেরামতের দামটা এবার বেশি নেয়া হচ্ছে।
কামার পট্টির ছয়টি দোকানে ২০ থেকে ২৫ জন লোহার শিল্পী এখন ক্রেতার আশায় দিন গুণছেন। এভাবে চলতে থাকলে তাদের কর্মচারী ও পরিবারের লোকজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হবে। এবং ঈদের আনন্দ থেকে বিরত থাকতে হবে তাদেরকে।
এই গরমের মধ্যে আগুনের পাশে থেকে এত কষ্টের কাজ করে তাদের মাসে আয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা যা জীবন ধারণে লেশমাত্র।
লৌহ কর্মকার সম্ভু কর্মকার জানান, তিনি সেই ১৯৭৩ সাল থেকে এ কাজ করছেন। এখনো তিনি এ কাজ করেই পরিবার পরিজন নিয়ে দু-বেলা খেয়ে পরে বাঁচেন। সারা বছরের মধ্যে তারা কোরবানি ঈদের অপেক্ষায় থাকেন। এ সময় লোকজন পশু জবাইয়ের নতুন নতুন লোহার যন্ত্রপাতি তৈরি করবেন বলে। কিন্তু তাদের আশা আশাই রয়ে যায়। দিন যত যাচ্ছে তাদের কাজ তত কমছে। এখন অল্প কিছু মানুষ নতুন তৈরি করে আর সবাই পুরানো যন্ত্রপাতি মেরামত, ধাড় বা শান দেবার জন্য আসে। তাই এ লোহার কাজ করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বাজারে রেডিমেট তৈরি চাপাতি, দা, ছুরি, বটি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে বলে আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে যাচ্ছে। কাজ নাই তা না তবে অতীতের তুলনায় কম। এবার যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে তাদের চলা খুবই কষ্টকর।
মঞ্জুর আলী মন্ডল জানান, ২৮ বছর এ পেশায় কর্মরত আছেন । কিন্তু গত বছরের তুলনাই এ বছরের কাজ খুবই কম। এদিকে কয়লা পাওয়া যায় না অনেক কষ্টে কয়লা যোগার করতে হয়। আর অনেক কষ্টের কাজ লোহার যন্ত্রপাতি তৈরি করা। সারাক্ষণ আগুনের পাশে বসে হাতুড়ি পিটাতে হয় । এ কাজ করে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। যা দিয়ে পরিবারের সব খরচ চালাতে হয়। এসব তৈরি করার জিনিস পত্রের যা দাম সেই হিসেবে ক্রেতাদের কাছে বললে তারা বলে কর্মকারা বেশি নিচ্ছে। তাদের কাজ ও কষ্টের তুলনায় একটু বেশিও পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না।
অপরদিকে ক্রেতা মো. চঞ্চল হোসেন জানান, তিনি চাপাতি ও ছুরি শান দিতে এসেছেন। কর্মকাররা যে পরিমাণ মূল্য চাইছে তাতে নতুন তৈরি করা যাবে। বিগত বছর বা দিনের তুলনায় অনেক বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই ক্রেতা।
লৌহ কর্মকারদের দাবি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাজবাড়ী কামারশালায় কর্মরত শ্রমিক ও তাদের পরিবার দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা।
রুবেলুর রহমান/এমএএস/পিআর