প্রতিমা গড়েই সংসার চালান ক্যানসার আক্রান্ত অর্পণ
তার বয়স এখন ২১। বছর ছয়েক আগে ধরা পড়েছে রক্তের ক্যানসার। ছোট থেকেই ছবি আঁকা ও পড়াশোনায় ভালো। শিক্ষকের প্রশংসায় পেয়েছেন সব সময়। নবম শ্রেণিতে ওঠার পরেই ক্রমশ রোগা হতে শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গের অর্পণ সর্দার। বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে দেখানোর পর ক্যানসার ধরা পড়ে।
টানা দুই বছর একটি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয় তাকে। এখনও চলছে কেমোথেরাপি। তাতে অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অর্পণ। শরীরে ক্যানসার নিয়েই এখন তিনি ব্যস্ত দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজে। গত দুই বছর ধরে এই কাজ করছেন তিনি।
ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তেই তৈরি করেছেন প্রতিমা। বাবা চন্দ্রনাথ স্থানীয় একটি ফুলের বাগানে মালির কাজ করেন। সংসারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। অর্পণের চিকিৎসার বিপুল খরচ চালাতে গিয়ে মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
অর্পণ হার মানতে চাননি। ছবি এঁকে টাকা উপার্জন না হওয়ায় মূর্তি গড়ার কাজে হাত দেন। অর্পণের বলেন, ‘পাড়ায় দেখতাম, কালী, লক্ষ্মী, বিশ্বকর্মা ও দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন অনেকেই। তাদের কাছেই একটু একটু করে প্রতিমা তৈরি করতে শিখেছি। তারপর আমিও দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা শুরু করলাম।’
প্রতিমার গায়ে মাটির আঁচর দিতে দিতে অর্পণ বলেন, ‘বাবার পক্ষে আমার চিকিৎসার খরচ জোগানো সম্ভব হচ্ছিল না। বাবারও বয়স হচ্ছে। একটা বোন আছে আমার। তার পড়াশোনার খরচ আছে। তাই সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি তা দেখে সিদ্ধান্ত নেই আমি বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে থাকবো না।’
অর্পণের কথায়, ‘ইচ্ছে ছিল সরকারি আর্ট কলেজে পড়ব। অনেক বড় শিল্পী হব। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। বছরে প্রায় চার মাস তো আমাকে হাসপাতালেই থাকতে হয়। বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করে বছরে প্রায় লাখ দেড়েক টাকা আয় হয়। ওই টাকা দিয়ে নিজের চিকিৎসার পাশপাশি সংসারে সাহায্য করি।’
তরুণ অর্পণ জানান, চলতি বছরে প্রতিমা তৈরি করে উপার্জন একটু বেশিই হয়েছে। একা পারেন না সব কাজ করতে। তাই তার সঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজে সাহায্য করেন কয়েক জন শ্রমিক। তাছাড়া তার মা-বাবাও তাকে এ কাজে সাহায্য করছেন।
এসএ/এমএস